যুক্তরাষ্ট্রে রোহিঙ্গাদের জন্য বিশেষ দূত নিয়োগের প্রস্তাব
2024.07.15
ওয়াশিংটন ডিসি

মিয়ানমার ও বাংলাদেশে থাকা বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের জন্য বিশেষ রাষ্ট্রদূতের পদ তৈরি এবং এই জনগোষ্ঠীর ওপর নৃশংস অপরাধ তদন্তের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংসদে ১০ মিলিয়ন ডলার (প্রায় ১১৮ কোটি টাকা) বার্ষিক বাজেটের প্রস্তাব উঠেছে।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন ২০২১ সালের মার্চ মাসে বলেছিলেন, মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ২০১৭ সালে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে মুসলিম সংখ্যালঘুদের “গণহত্যা করেছে” এবং হাজার হাজার মানুষকে সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে বাধ্য করেছে।
ইউএস এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টের তথ্য অনুসারে প্রায় ১২ লাখ রোহিঙ্গা এখন কক্সবাজারের শরণার্থী শিবিরে বাস করছে। সংস্থাটি বলছে, রোহিঙ্গারা বর্তমানে দৈনিক মাত্র ১০ ডলারের খাদ্য রেশন পাচ্ছে যা অপর্যাপ্ত।
রোহিঙ্গা গণহত্যার জবাবদিহিতা ও সুরক্ষা আইন (The Rohingya Genocide Accountability and Protection Act) নামে প্রস্তাবিত এই আইনটি যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরে “রোহিঙ্গা নৃশংসতা প্রতিরোধ ও প্রতিক্রিয়ার জন্য একজন বিশেষ সমন্বয়কারীর” পদ প্রতিষ্ঠা করবে এবং পাঁচ বছরের জন্য বার্ষিক ১০ মিলিয়ন ডলার বাজেট প্রদান করবে।
এ বিষয়ক একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, “নৃশংস অপরাধের তদন্ত, নথিপত্র এবং মামলা কার্যক্রম, অন্তর্বর্তীকালীন বিচার, জবাবদিহিতা ব্যবস্থা, সাক্ষী সুরক্ষা ব্যবস্থা এবং রোহিঙ্গা সম্পর্কিত প্রযুক্তিগত সহায়তার জন্য এই দূতকে দায়িত্ব দেওয়া হবে।”
তাছাড়া বিলটি অনুসারে “বার্মায় সংঘাত পর্যবেক্ষক” পদ তৈরি করা হবে, যাকে মিয়ানমারে রাজনৈতিক সহিংসতার উপর নজরদারি ও রিপোর্ট করার দায়িত্ব দেওয়া হবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য উচ্চ-শিক্ষার বৃত্তিও অনুমোদিত হবে।

টেক্সাসের রিপাবলিকান এবং হাউস ফরেন অ্যাফেয়ার্স কমিটির চেয়ারম্যান মাইকেল ম্যাককল এবং নিউইয়র্কের ডেমোক্র্যাট দলের ফরেন অ্যাফেয়ার্স কমিটির সদস্য গ্রেগরি মিকস যৌথভাবে এই আইনটি উত্থাপন করেছেন৷
বৃহস্পতিবার উভয় দলের সমর্থনসহ সংশ্লিষ্ট কমিটিতে এটি অনুমোদিত হয়েছে। এখন পূর্ণাঙ্গ প্রতিনিধি পরিষদে ভোটাভুটির জন্য যাচ্ছে। প্রতিনিধি পরিষদে পাশ হলে এটি মার্কিন সংসদের উচ্চকক্ষ সিনেটে অনুমোদিত হতে হবে।
কমিটির মার্ক-আপ অধিবেশনে বক্তৃতায় ম্যাককল বলেন, আইনটি দ্রুত পাস করার নৈতিক বাধ্যবাধকতা আছে।
“এই প্রস্তাবটি বার্মার সংকট এবং রোহিঙ্গা গণহত্যা মোকাবেলায় আমাদের উভয় দলের সমর্থনের ধারাবাহিকতা," উল্লেখ করে তিনি বলেন, “আমি আমার সহকর্মীদের এই গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপকে সমর্থন করার জন্য অনুরোধ করছি। আসুন বিশ্বকে দেখাই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস গণহত্যাকে বিনা-জবাবে পার পেতে দেবে না।”
কমিটিতে অনুমোদনের পরে মিকস এক বিবৃতিতে প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন, বিলটি শেষ পর্যন্ত হাউসে দ্রুত পাস হবে।
মিকস বলেন, “দুই বছর আগে স্টেট ডিপার্টমেন্টের যে দৃঢ় অবস্থান তা কেবল বার্মার সামরিক বাহিনী গণহত্যা ও মানবতার বিরুদ্ধে যে অপরাধ করেছে এবং রোহিঙ্গারা যে নৃশংসতার শিকার হয়েছে তার সমালোচনামূলক স্বীকৃতি নয়, বরং পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বানও ছিল,” বলেছেন মিকস।
“রোহিঙ্গা জিএপি আইন রোহিঙ্গাদের সুরক্ষা ও সহায়তা এবং এমন ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি না হয় তা নিশ্চিত করার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। আমি সংসদে এই আইনটি দ্রুত পাশ হওয়ার অপেক্ষায় রয়েছি।"