রোহিঙ্গাদের জন্য ত্রাণবাহী মালয়েশিয়ান জাহাজ ভিড়েছে বাংলাদেশে
2017.02.13

রোহিঙ্গাদের জন্য ত্রাণ নিয়ে মালয়েশিয়ান জাহাজ সোমবার বাংলাদেশ জলসীমায় প্রবেশ করেছে। জাহাজটিকে চট্টগ্রাম বন্দরে নোঙর করিয়ে ত্রাণ সামগ্রীগুলো নামানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষ।
বাংলাদেশ সরকারের একটি সূত্র বেনারকে জানায়, ব্যস্ততম চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজটি নোঙরের সুবিধা এবং স্বেচ্ছাসেবীদের অবতরণের জন্য জরুরি বিষয়গুলো নিশ্চিত করতে জাহাজটিকে প্রথমে কক্সবাজার উপকূলে সাময়িক নোঙর করতে বলা হয়েছিল।
নটিক্যাল আলিয়া নামের ত্রাণবাজী জাহাজটির এক সূত্র জানায়, প্রাথমিকভাবে বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ ১৭০০ টন ত্রাণ সামগ্রীবাহী জাহাজটিকে চট্টগ্রামের মতো ব্যস্ততম বন্দরে নোঙর না করানোর পক্ষে ছিলেন। জাহাজটিতে খাদ্য সামগ্রীর পাশাপাশি, কাপড়চোপড়, কম্বল এবং ওষুধপত্র রয়েছে।
ত্রাণ সামগ্রীগুলো চট্টগ্রাম থেকে সড়কপথে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে নিয়ে যাওয়া হবে। উল্লেখ্য, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সাম্প্রতিক সংহিংসতা শুরু হবার পর এখন পর্যন্ত প্রায় ৬৬ হাজার রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন।
“জাহাজটি আজ রাত বা মঙ্গলবার ভোরে চট্টগ্রাম বন্দরে নোঙর করবে বলে আশা করা যায়। আমরা স্বেচ্ছাবেসীদের ত্রাণ সামগ্রীগুলো কক্সবাজারে রোহিঙ্গাদের মাঝে সরাসরি বিতরণের সুযোগ দেবো,” বেনারকে জানান পররাষ্ট্র সচিব (মেরিটাইম অ্যাফেয়ার্স) রিয়ার এডমিরাল খোরশেদ আলম।
অবশ্য ত্রাণবাহী জাহাজের সাথে আসা বিভিন্ন দেশের ২৩০জন স্বেচ্চাসেবীর কতজনকে জাহাজ থেকে নামার অনুমতি দেয়া হবে সে বিষয়ে এখনো সরকারি সিদ্ধান্ত হয়নি।
“আমরা তাদের সাথে সাক্ষাৎ করে আগ্রহীদেরকে ভিসা দেবো। সবাই হয়ত চট্টগ্রাম থেকে সাত ঘণ্টা দূরত্বের শরণার্থী শিবিরে যেতে আগ্রহী নাও হতে পারেন।”, বলেন খোরশেদ আলম।
জাহাজ থেকে ত্রাণ সামগ্রী খালাসের পর তা রোহিঙ্গাদের মাঝে বিতরণের জন্য কক্সবাজার জেলা প্রশাসন এবং ইন্টারন্যাশনাল অরগানাইজেশন ফর মাইগ্রেশন (আইওএম) কর্মকর্তাদের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
“বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে রোহিঙ্গা শিবির পর্যন্ত পৌঁছানো এবং ত্রাণ বিতরণে সব ধরনের সহযোগিতার নিশ্চয়তা দেয়া হয়েছে,” জাহাজ থেকে সোমবার বেনারকে জানান ত্রাণ মিশনের প্রধান মালয়েশিয়ার নাগরিক আজিজ আব্দুল রহিম।
“বাংলাদেশ নৌবাহিনীর কর্মকর্তা নাজমুল হক ত্রাণবাহী জাহাজ নটিক্যাল আলিয়াতে এসে আমাদেরকে স্বাগত জানিয়েছেন, আমরা তার প্রতিও কৃতজ্ঞতা জানাই।” হোয়াটসআপ বার্তায় জানান আব্দুল রহিম।
মিয়ানমার হয়ে বাংলাদেশ
গত সপ্তায় রাখাইন রাজ্যের রোহিঙ্গাদের মাঝে বিতরণের জন্য ৫০০টন ত্রাণ সামগ্রী মিয়ানমারের ইয়াঙ্গুন বন্দরে নামিয়ে জাহাজটি বাংলাদেশের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেয়। ত্রাণ সামগ্রীর মধ্যে ছিল ইনস্ট্যান্ট নুডলস, বোতলজাত পানি এবং প্রাথমিক চিকিৎসার সরঞ্জাম।
জাহাজটি ৯ ফেব্রুয়ারি ইয়াঙ্গুন পৌঁছে বন্দরে বৌদ্ধ জাতীয়তাবদীদের রোহিঙ্গা-বিরোধী প্রতিবাদ মিছিলের মুখোমুখী হয়। মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ জাহাজটিকে রাখাইনের রাজধানী সিত্তে যাবার অনুমিতি দিতে অস্বীকার করে। তারা জাহাজের ২৩০ জন স্বেচ্ছাসেবীর কাউকেও ইয়াঙ্গুন বন্দরে নামার অনুমতি দেয়নি।
চিকিৎসকসহ এই স্বেচ্ছাসেবী দলে মালয়েশিয়ার নাগরিক ছাড়াও রয়েছেন তুরস্ক, ইন্দোনেশিয়া, চীন, যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, থাইল্যান্ড ও ফিলিস্তিনের নাগরিক। অবশ্য আনুষ্ঠানিকভাবে ত্রাণ সামগ্রীগুলো মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তরের জন্য গত বৃহস্পতিবার ৩০ জন স্বেচ্ছাসেবককে ইয়াঙ্গুন বন্দরে নামার অনুমতি দেয়া হয়েছিল।
“জাহাজটিকে চট্টগ্রামে স্বাগত জানানোর জন্য আমরা সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছি,” বেনারকে জানান নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাংলাদেশ নৌবাহিনীর একজন কর্মকর্তা।