চলন্ত বাসে রুপাকে ধর্ষণের পর হত্যা মামলায় ৪ জনের ফাঁসি

জেসমিন পাপড়ি
2018.02.12
ঢাকা
রায়ের পর কারাগারে নেওয়ার পথে কলেজছাত্রী রুপাকে চলন্ত বাসে ধর্ষণের পর হত্যার দায়ে দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা। রায়ের পর কারাগারে নেওয়ার পথে কলেজছাত্রী রুপাকে চলন্ত বাসে ধর্ষণের পর হত্যার দায়ে দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা। ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৮।
নিউজরুম ফটো

চলন্ত বাসে কলেজছাত্রী জাকিয়া সুলতানা রুপাকে ধর্ষণের পর হত্যার দায়ে বাসটির চালক এবং সহকারীসহ চারজনের ফাঁসির আদেশ দিয়েছে বাংলাদেশের একটি আদালত। অপর এক আসামিকে সাত বছরের কারাদণ্ড দেওয়ার পাশাপাশি যে বাসে ভয়াবহ ঘটনাটি ঘটেছিল, সেটি জব্দ করে নিহতের পরিবারকে দিয়ে দেবার আদেশও দেওয়া হয়েছে।

অভিযোগ গঠন থেকে মাত্র ১৪ কর্মদিবসেই সোমবার চাঞ্চল্যকর এ মামলার রায় ঘোষণা করেন টাঙ্গাইল নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আবুল মনসুর মিয়া। আসামিরা এ সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন।

এ রায়কে বাংলাদেশের বিচার বিভাগের ইতিহাসে একটি দৃষ্টান্ত বলে মনে করছেন মানবাধিকার কর্মীরা।

“এ রায় প্রমাণ করে সদিচ্ছা আর ওপরের কোনো চাপ না থাকলে উপযুক্ত প্রমাণের প্রেক্ষিতে অপরাধীদের শাস্তির আওতায় আনা যায়,” বেনারকে বলেন মানবাধিকার আইনজীবী সালমা আলী।

নিম্ন আদালতের মতোই দ্রুত গতিতে চাঞ্চল্যকর এই মামলা হাই কোর্ট ও সুপ্রিম কোর্টেও শেষ হওয়ার পাশাপাশি এ রায় বহাল থাকবে এবং দ্রুত কার্যকর হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

“আমরা মানবাধিকার কর্মীরা মৃত্যুদণ্ডের বিরোধী। তারপরেও বলছি, রুপাকে ধর্ষণের পর নির্মমভাবে মেরে ফেলার শাস্তি মৃত্যুদণ্ড ছাড়া কিছু হতে পারে না। এ ধরনের রায় দ্রুত কার্যকর হলে ধর্ষণের মতো অপরাধ সমাজে কমে আসবে,” বলেন সালমা আলী।

“এত দ্রুত সময়ে কোনো মামলার নিষ্পত্তি হয়নি। তাই রুপা হত্যার মামলা একটি উদাহরণ হয়ে থাকবে,” বেনারকে বলেন এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী নাছিমুল আক্তার।

গত বছরের ২৫ আগস্ট বগুড়ায় পরীক্ষা দিয়ে ময়মনসিংহ যাওয়ার পথে ছোঁয়া পরিবহনের একটি চলন্ত বাসে রুপাকে ধর্ষণের পরে হত্যা করে টাঙ্গাইলের মধুপুর বন এলাকায় ফেলে যায় বাসটির চালক, সহকারী ও সুপারভাইজার। একটি বহুজাতিক কোম্পানির বিপণন বিভাগে কর্মরত রুপা ঢাকার আইডিয়াল ল কলেজের ছাত্রী ছিলেন। তার গ্রামের বাড়ি সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলায়।

বাস চালকসহ যে চারজনকে ফাঁসির রায় দেওয়া হয়েছে, তারা হলেন- ছোঁয়া পরিবহনের চালক হাবিব মিয়া (৪৫), মো. শামীম (২৬), আকরাম (৩৫) ও জাহাঙ্গীর আলম (১৯)। এছাড়া সুপারভাইজার মো. ছবর আলীকে (৫৫) সাত বছরের কারাদণ্ড ও এক লাখ টাকা জরিমানা করেছে আদালত।

যেদিন রুপার লাশ পাওয়া যায় সেদিনই অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে একটি মামলা করে টাঙ্গাইলের মধুপুর থানা-পুলিশ। মাত্র চার দিনের মাথায় গত বছর ২৯ আগস্ট ওই বাসের তিন সহকারী শামীম, আকরাম, জাহাঙ্গীর এবং পরদিন চালক হাবিবুর এবং সুপারভাইজার সফর আলী রুপাকে ধর্ষণের পর হত্যার কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দেন।

এরপর গত ১৫ অক্টোবর পাঁচ পরিবহন শ্রমিককে আসামি করে পুলিশ অভিযোগপত্র দায়ের করলে ২৯ নভেম্বর থেকে এ মামলার বিচার শুরু করে টাঙ্গাইলের আদালত। এর তিন মাসের মাথায় সোমবার এ মামলার রায় ঘোষণা হলো।

রাষ্ট্রপক্ষে এই মামলা পরিচালনা করেন নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিশেষ পিপি নাছিমুল আক্তার, তাকে সহায়তা করেন মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার টাঙ্গাইল জেলা সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান আজাদ। আসামি পক্ষের আইনজীবী ছিলেন শামীম চৌধুরী দয়াল ও দেলুয়ার হোসেন।

সন্তুষ্ট পরিবার

রুপা হত্যার রায়ে সন্তোষ জানিয়েছে তাঁর পরিবার। দেশের অন্য বিচারপ্রার্থীরাও যেন এমন দ্রুততার সঙ্গে ন্যায়বিচার পায় সে আশাও ব্যক্ত করেছেন তাঁরা।

“একদিকে দ্রুততম সময়ে বিচারকাজ শেষ হয়েছে, অন্যদিকে আমার বোনের চার খুনির ফাঁসির আদেশ হয়েছে। আমরা ন্যায়বিচার পেয়েছি, আমরা সন্তুষ্ট,” রায়ের প্রতিক্রিয়ায় সাংবাদিকদের বলেন রুপার ভাই হাফিজুল ইসলাম প্রামাণিক।

তবে সাত বছর দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি ছবর আলীর যাবজ্জীবন হলে আরও খুশি হতেন বলেও জানান তিনি।

হাফিজুর বলেন, “আমার বোন রুপার মতো আর কেউ যেন এমন নির্মম ঘটনার শিকার না হয়। রুপা হত্যার বিচার যত দ্রুত গতিতে হয়েছে দেশের অন্য বিচারপ্রার্থীরাও যেন তত দ্রুত ন্যায়বিচার পায়।”

রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করলেও এ রায় যাতে উচ্চ আদালতে বহাল থাকে এবং দ্রুত কার্যকর করা হয় সে আহ্বান জানিয়েছেন রুপার বোন মাশরুফা আক্তার পপি।

তিনি বেনারকে বলেন, “আসামিদের দণ্ড কার্যকর হলে সমাজে এ ধরনের ঘটনা কমে আসবে। মেয়েরা নিরাপদে চলাচল করতে পারবে। আর কোনো রুপার নির্মম মৃত্যু হবে না।”

তবে এ রায়ে আসামিরা ন্যায়বিচার পায়নি বলে অভিযোগ এনেছে আসামিপক্ষ। আসামিদের আইনজীবী শামীম চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, “রায়ের কপি পেলে এর বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিলে করা হবে।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।