জঙ্গিবাদ বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্মেলনে ঢাকায় আসছেন ১৪ দেশের পুলিশ প্রধান

প্রাপ্তি রহমান
2017.03.09
ঢাকা
সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন পুলিশের মহাপরিদর্শক সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন পুলিশের মহাপরিদর্শক একেএম শহীদুল হক।
সৌজন্যে: পুলিশ সদর দপ্তর

জঙ্গিবাদ দমনে পরামর্শ করতে প্রথমবারের মতো পুলিশের আন্তর্জাতিক সংস্থা ইন্টারপোল ও বাংলাদেশ পুলিশ আন্তর্জাতিক সম্মেলন আয়োজন করেছে। ঢাকায় আয়োজিত এ সম্মেলনে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোসহ মোট ১৪ টি দেশের পুলিশপ্রধান ও শীর্ষ কর্মকর্তারা অংশ নেবেন।

‘চিফস অফ পুলিশ কনফারেন্স অফ সাউথ এশিয়া অ্যান্ড নেইবারিং কান্ট্রিজ অন রিজিওনাল কোঅপারেশন ইন কারবিং ভায়োলেন্ট এক্সট্রিমিজম অ্যান্ড ট্রান্স ন্যাশনাল ক্রাইম’ শীর্ষক তিন দিন ব্যাপী ওই সম্মেলনটি শুরু হচ্ছে আগামী ১২ মার্চ। ১৪ মার্চ যৌথ ঘোষণার মধ্য দিয়ে সম্মেলনটি শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।

এই সম্মেলন সম্পর্কে জানাতে বৃহস্পতিবার পুলিশ সদর দপ্তরে সংবাদ সম্মেলনে পুলিশের মহাপরিদর্শক একেএম শহীদুল হক বলেন, “বাংলাদেশ সফলভাবে জঙ্গিবাদ দমন করেছে। কিন্তু নির্মূল হয়নি। সে জন্য অন্যান্য দেশের সহযোগিতা প্রয়োজন।”

“বাংলাদেশ এখনো জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসের ভয়াল থাবা থেকে মুক্ত নয়। জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস দমনে প্রতিবেশী দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয়, সহযোগিতা ও অভিজ্ঞতা বিনিময় এখন অত্যন্ত প্রয়োজন,” শহীদুল হক বলেন।

বাংলাদেশের পুলিশ অন্যান্য দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগ বাড়াতে চায় বলেও জানান তিনি।

তবে, সম্মিলিত চেষ্টা ছাড়া জঙ্গিবাদ দমন সম্ভব নয় এমন মন্তব্য করলেও গতকালও পুলিশের মহাপরিদর্শক বলেছেন, বাংলাদেশের জঙ্গিরা ‘হোমগ্রোন’। তাদের সঙ্গে বাইরের দেশের কোনো যোগাযোগ নেই।

জঙ্গিবাদ দমনে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা অত্যাবশ্যক জানিয়ে এ সম্মেলনকে সময়োপযোগী বলছেন বিশ্লেষকেরা।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পিস অ্যান্ড সিকিউরিটিজ স্টাডিজের প্রেসিডেন্ট মেজর জেনারেল (অব) মনিরুজ্জামান বেনারকে বলেন, “জঙ্গিবাদ বৈশ্বিক ইস্যু। মোকাবিলাও বৈশ্বিকভাবে করতে হবে।”

“আল কায়েদা, আইএসসহ সব কটি জঙ্গি গোষ্ঠী বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোয় ঘাঁটি করতে চাচ্ছে। পারস্পরিক তথ্য বিনিময়ের সুযোগ না থাকলে এ অঞ্চলে জঙ্গিবাদ মোকাবিলা কঠিন হবে,” মনিরুজ্জামান বলেন।

তাঁর মতে, “এ অঞ্চলে ইন্টারনেটের দ্রুত প্রসারে তরুণরা অনলাইন থেকেই জঙ্গিবাদ ও বোমা বানানোর প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। তাই সাইবার স্পেস নিরাপদ রাখতেও দেশগুলোর মধ্যে সহযোগিতা বাড়ানো দরকার।”

সম্মেলনে যেসব বিষয় আলোচনা হবে

এই আন্তর্জাতিক সম্মেলনে জঙ্গিবাদ দমন, মানবপাচার, অর্থনৈতিক অপরাধ এবং সন্ত্রাসী অর্থায়ন, মাদকদ্রব্য পাচার রোধ, অবৈধ অস্ত্র চোরাচালান প্রতিরোধ, গোয়েন্দা তথ্য আদান-প্রদান, সাইবার অপরাধ নিয়ন্ত্রণ ইত্যাদি বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে।

সম্মেলনে অংশ নিচ্ছেন আফগানিস্তান, অস্ট্রেলিয়া, ভুটান, ব্রুনেই, চীন, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, মালদ্বীপ, মালয়েশিয়া, মিয়ানমার, নেপাল, দক্ষিণ কোরিয়া, শ্রীলঙ্কা, ও ভিয়েতনামের পুলিশ প্রধান বা পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তারা।

এ ছাড়াও পুলিশের আন্তর্জাতিক সংস্থা ইন্টারপোল, যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (এফবিআই), অস্ট্রেলিয়ার অস্ট্রেলিয়ান ফেডারেল পুলিশ (এএফপি) সহ আসিয়ান পোল, অপরাধ তদন্ত নিয়ে গবেষণাকারী প্রতিষ্ঠান ইন্টারপোল গ্লোবাল কমপ্লেক্স ফর ইনোভেশন (আইজিসিআই), ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ট্রেনিং অ্যাসিসটেন্স প্রোগ্রাম থেকেও কর্মকর্তারা আসছেন। এবারই প্রথম পুলিশের ডাকে সাড়া দিয়েছে ফেসবুকও।

সম্মেলনে বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক ইন্টারপোলের মহাসচিবসহ নয়টি দেশের পুলিশ প্রধানের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন।

এক প্রশ্নের জবাবে পুলিশের মহাপরিদর্শক বলেন, “জঙ্গিবাদ দমনে আলোচনায় পাকিস্তানের অংশগ্রহণ জরুরি ছিল। দেশটিকে আমন্ত্রণ জানানো হলেও, তারা কোনো জবাব দেয়নি।”

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুলিশের শীর্ষ পর্যায়ের এক কর্মকর্তা বেনারকে বলেন, “সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দেশি জঙ্গিদের সঙ্গে বিদেশিদের কোনো যোগাযোগ নেই এমনটাই বলছে পুলিশ। তবে বাস্তবতা আলাদা।”

“মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুরে বাংলাদেশি জঙ্গিদের বিচার হয়েছে বা বিচারের জন্য বাংলাদেশে পাঠানো হয়েছে। সিরিয়ায় বাংলাদেশিরা আইএসের পক্ষে যুদ্ধ করছেন এটাও সত্য। এসব সমস্যা দেখা দিয়েছে বলেই ইন্টারপোল ও বাংলাদেশ পুলিশ একটি আঞ্চলিক মোর্চা গঠনের চেষ্টা করছে,” বলেন তিনি।

এদিকে পুলিশের সহকারী মহাপরিদর্শক মো. মনিরুজ্জামান বেনারকে বলেন, বাংলাদেশ দ্বিপক্ষীয় চুক্তি স্বাক্ষরের চেষ্টা করবে যেন জঙ্গিবাদ দমনে তাৎক্ষণিক তথ্য পুলিশ পেতে পারে।

“বাংলাদেশে এফবিআই এর অফিস আছে। অস্ট্রেলিয়া ইয়াঙ্গুন থেকে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখে। আমাদের জন্য দিল্লি থেকে সন্ত্রাসী ধরা এখন খুব সহজ। এই সহযোগিতাটা অন্যান্য দেশের সঙ্গে আমরা বাড়াতে চাই। বিশেষ করে মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর ও ইন্দোনেশিয়ার সঙ্গে,” মনিরুজ্জামান বলেন।

ভারতের মতো এ অঞ্চলে গুরুত্বপূর্ণ দেশ চীনের সঙ্গে বাংলাদেশ পুলিশ বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রাখতে চায়। পুলিশ কর্মকর্তারা বলছিলেন, বাংলাদেশ পুলিশ তার সমস্ত লজিস্টকস এর জন্য চীনের ওপর নির্ভর করে।

ফেসবুকের সাহায্য চাইবে বাংলাদেশ

মনিরুজ্জামান বলছিলেন, ৭০০ জঙ্গির ওপর জরিপ চালিয়ে দেখা গেছে ৮২ ভাগ তরুণ নিজেরাই নিজেদের উদ্বুদ্ধ করেছে ইন্টারনেট ব্যবহার করে। এ সমস্যা সমাধানে ফেসবুকের সহযোগিতা চাইবে বাংলাদেশ।

এ ছাড়া সাইবার স্পেস ব্যবহার করে যে কোনো অপরাধ শনাক্ত করা ও তদন্ত করায় সবচেয়ে এগিয়ে আছে দক্ষিণ কোরিয়া। দক্ষিণ কোরিয়া কীভাবে কাজটি করছে, কীভাবে বাংলাদেশ সহযোগিতা পেতে পারে সে ব্যাপারে বৈঠকে আলোচনা হবে।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।