সামরিক মর্যাদায় র্যাব গোয়েন্দা প্রধানের দাফন, চলছে বড়হাটের অভিযান
2017.03.31
ঢাকা

পূর্ণ সামরিক মর্যাদায় দাফন করা হলো র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) গোয়েন্দাপ্রধান লেফটেন্যান্ট কর্নেল আবুল কালাম আজাদকে।
সিলেটের আতিয়া মহলে ‘অপারেশন টোয়াইলাইট’ চলাকালে বোমার আঘাতে আহত হবার এক সপ্তাহ পর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
ময়নাতদন্ত শেষে ঢাকা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের প্রধান সোহেল মাহমুদ জানান, বোমার স্প্রিন্টারের আঘাতেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে।
শুক্রবার বিকেলে বনানী সামরিক কবরস্থানে পূর্ণ সামরিক মর্যাদায় তাঁকে দাফন করা হয় বলে র্যাব সূত্রে জানা যায়। এর আগে ঢাকা সেনানিবাসের কেন্দ্রীয় মসজিদ ও উত্তরা র্যাব সদর দপ্তরে তাঁর জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।
এই নিয়ে আতিয়া মহল জঙ্গিমুক্ত করার অভিযানে সেনাবাহিনীর একজন, পুলিশের দুইজনসহ মোট সাতজন মানুষ নিহত হলেন।
লে কর্ণেল আবুল কালাম আজাদ র্যাবের ১৪ ব্যাটালিয়নের গোয়েন্দা বিভাগের নেতৃত্বে ছিলেন।
জঙ্গি হামলায় আজাদের মৃত্যু বাহিনীগুলোর জন্য একটা ধাক্কা বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্বিবিদ্যালয়ের আইন বিভাগের প্রধান শেখ হাফিজুর রহমান।
“ধারাবাহিক অভিযানে জঙ্গিরা বেশ দুর্বল হয়ে পড়েছে এমনটাই আশা করা হচ্ছিল। এ পর্যায়ে র্যাবের গোয়েন্দা প্রধানের মৃত্যু সহকর্মীদের জন্য একটা ধাক্কা তো বটেই,” শেখ হাফিজুর রহমান বলেন।
অন্যদিকে পুলিশ সদর দপ্তরের কাউন্টার টেররিজমের ফোকাল পয়েন্ট মো. মনিরুজ্জামান বলেন, “আমরা আসলে সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে একটা যুদ্ধের মধ্যে আছি। দায়িত্ব পালনকালে আমরা যে কেউ যেকোনো সময় নিহত হতে পারি।”
অন্য ৩ অভিযানের ২টি সমাপ্ত, সাময়িক স্থগিত ১টি
শুক্রবার সন্ধ্যার পর মৌলভীবাজার জেলার বড়হাটের অপারেশন ম্যাক্সিমাস স্থগিত করা হয়েছে। শনিবার সকাল থেকে আবারও অভিযান শুরুর কথা। এখন পর্যন্ত ওই ঘটনায় একজন পুলিশ সদস্যের আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্স ন্যাশনাল ক্রাইম বিভাগের প্রধান মনিরুল ইসলাম বড়হাটের পরিস্থিতিকে ‘খুব জটিল’ বলে মন্তব্য করেছেন।
“ধারণা করছি, বাড়ির ভেতর কয়েকজন আছে। ভবনের ভেতর অনেক বিস্ফোরক আছে। এ অপারেশন কিছুটা জটিল,” মনিরুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন।
এ দিকে কুমিল্লার কোটবাড়ি উপজেলার গন্ধমতি গ্রামের আস্তানা থেকে বিপুল পরিমাণ গোলাবারুদ ও বোমা পাওয়া গেলেও সেখান থেকে জঙ্গিরা পালিয়ে গেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
সিলেটের আতিয়া মহলে ১১১ ঘণ্টা ধরে চলা অভিযান শেষ হওয়ার একদিন পর মৌলভীবাজারে দুটি ও কুমিল্লায় আরও একটি আস্তানার খোঁজ মেলে। প্রায় দু’সপ্তাহ ধরে বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী টানা অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে।
মৌলভীবাজারের প্রথম অভিযানটি চালানো হয় নাসিরপুরের জঙ্গি আস্তানায়। অপারেশন হিট ব্যাক নামের এই অভিযানটি শেষ হয় বৃহস্পতিবার। এতে চার শিশু, দুই নারী ও একজন পুরুষের নিহত হওয়ার সংবাদ পাওয়া গেছে হাসপাতাল সূত্রে। তবে এখন পর্যন্ত কারো পরিচয় নিশ্চিত করেনি পুলিশ।
বড়হাটের আস্তানায় বোম্ব এক্সপার্ট
শুক্রবার সকাল ৮ টা ৩২ মিনিটে পুলিশের স্পেশাল উইপনস অ্যান্ড ট্যাকটিক্স (সোয়াট) ‘অপারেশন ম্যাক্সিমাস’ নামে মৌলভিবাজারের বড়হাট উপজেলায় অভিযান শুরু করে। মৌলভীবাজারের দ্বিতীয় এই অভিযানের শুরুতেই বাড়িটি চারপাশে প্রায় আধা কিলোমিটার এলাকা ঘিরে আশপাশে জারি করা হয় ১৪৪ ধারা।
বেলা সাড়ে ১২টার দিকে মনিরুল ইসলাম ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের বলেন, পুলিশ ধারণা করছে ভেতরে একজন ‘বোম্ব এক্সপার্ট’ রয়েছে।
“ভেতরে খুব জটিল পরিস্থিতি, বাড়িটির ভেতরে একাধিক কামরা রয়েছে। চার থেকে পাঁচজন জঙ্গি আছে বলে মনে হচ্ছে। তাদের একজন বোম্ব এক্সপার্ট। আমরা ঘেরাও করার পর থেকে একাধিক বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে, গুলিও করেছে,” মনিরুল ইসলাম বলেন।
অভিযান পর্যবেক্ষণ করছেন এমন একজন পুলিশ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বেনারকে বলেন, তাঁরা ড্রোনের মাধ্যমে আস্তানার ভেতরকার কিছু ছবি পেয়েছেন। ওই ছবিতে তিনজন ‘জঙ্গি’কে দেখা গেছে। একজন নারীকেও দেখা গেছে।
মুহুর্মুহু গুলি-বোমা, আহত ১ পুলিশ কনস্টেবল
‘জঙ্গি’দের ছোড়া বোমার আঘাতে কায়সার উদ্দিন নামের একজন কনস্টেবল আহত হয়েছেন। তিনি বর্তমানে মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।
বেলা পৌনে ১ টার দিকে মুহুর্মুহু গুলির শব্দ পাওয়া যায়। এর কিছুক্ষণ পরই ঘটনাস্থল থেকে দ্রুত একটি অ্যাম্বুলেন্স বেরিয়ে যেতে দেখা যায়। পরে জানানো হয় অ্যাম্বুলেন্সে করে আহত কনস্টেবল কায়সারকে হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে।
সংবাদ সংগ্রহের জন্য ঘটনাস্থলে থাকা সাংবাদিকেরা কাজ করছেন বড়হাটের জঙ্গি আস্তানা থেকে বেশ খানিকটা দূরে। কথা বলে জানা গেছে, তাঁরা সকাল ৯টা থেকে থেমে থেমে গুলির শব্দ শোনেন। বেলা ১টার দিকে বিকট শব্দে পরপর দুটি বোমা ও বিকেলে সাড়ে চারটার দিকে আবারও বোমার শব্দ পান। এ সময় দূর থেকে ওই ভবনটি থেকে ধোঁয়া উড়তেও দেখা গেছে।
কুমিল্লার আস্তানা থেকে পালিয়েছে দুই জঙ্গি
চট্টগ্রাম রেঞ্জের উপমহাপরিদর্শক মো. শফিকুর রহমান কুমিল্লা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বলেন, পুলিশ আস্তানাটি চিহ্নিত করার আগেই দুই জঙ্গি পালিয়ে যায়। ওই দুই জঙ্গির একজনের নাম আনাস ওরফে আনিস। আনাসের বাড়ি নোয়াখালী, বয়স ১৯/২০। অপরজনের নাম রনি। তার বাড়ি রাজশাহী। বয়স ২২/২৩ বছর। দুজনেই মাস পাঁচেক আগে থেকে নিখোঁজ।
তবে শুক্রবার সকাল ১১টার দিকে শুরু হওয়া অভিযানে সোয়াট টিমের সদস্যরা বাড়িটি থেকে কিছু বিস্ফোরক ও সুইসাইডাল ভেস্ট উদ্ধার করেন।
অভিযানে অংশ নেওয়া সোয়াটের একজন সদস্য বেনারকে বলেন, “বাড়িটির দোতলায় একটি কক্ষ তালাবদ্ধ ছিল। তার বাইরে অন্য কক্ষগুলোয় অভিযান চালিয়ে কিছু বিস্ফোরক ও সুইসাইডাল ভেস্ট পাওয়া গেছে।”