দিনাজপুরে পীর ও মুরিদকে একসঙ্গে জবাই করে হত্যা
2017.03.13
ঢাকা

বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের জেলা দিনাজপুরে একজন পীর ও তাঁর নারী মুরিদকে গলা কেটে এবং গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। গত এক সপ্তাহের মধ্যে পরপর কয়েকটি জঙ্গি হামলার ধারাবাহিকতায় এই নৃশংস হত্যাকাণ্ড নতুন আতংক সৃষ্টি করেছে।
সোমবার রাত সাড়ে নয়টার দিকে দিনাজপুরের বোচাগঞ্জের দৌলাগ্রামে আস্তানায় ফরহাদ হোসেন চৌধুরী (৬০) এবং তাঁর এক নারী মুরিদকে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা।
নিহত নারীর নাম রূপালি বেগম, বয়স ২০ থেকে ২২ বছর। তিনি ফরহাদের বাড়িতে গৃহকর্মীর কাজ করতেন বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। গত বৃহস্পতিবার রূপালি বিয়ে করেছেন বলে স্থানীয় সূত্রে জানা যায়।
পুলিশের প্রাথমিক ধারণা, এই ঘটনার সঙ্গে জঙ্গি সম্পৃক্ততা থাকতে পারে। হত্যার ধরন দেখে তাদের এমনটি মনে হয়েছে।
দিনাজপুরের পুলিশ সুপার হামিদুল আলম বেনারকে বলেন, “এই হত্যাকাণ্ডে কারা জড়িত বা জঙ্গি সম্পৃক্ততা আছে কিনা—তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।”
জোড়া খুনের ঘটনাটি সন্ধ্যা সাতটা থেকে রাত আটটার মধ্যে ঘটতে পারে বলে জানান তিনি।
নিহতের লাশ ময়না তদন্তের জন্য দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন বোচাগঞ্জ থানার ওসি হাবিবুল ইসলাম। তিনি বলেন, স্থানীয়রা লাশ দেখতে পেয়ে পুলিশে খবর দেয়। দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশগুলোকে উদ্ধার করে পুলিশ।
স্থানীয়দের বরাত দিয়ে দিনাজপুরের সাংবাদিক বিপুল সরকার বেনারকে জানান, “মোহাম্মদী কাদেরিয়া দরবার শরিফ নামের এই পীরের দরগাটি গত ৮-১০ বছর ধরে চালাচ্ছিলেন ফরহাদ হোসেন। সেখানে সপ্তাহে এক দিন বিশেষ জিকিরের আসর বসত।”
সোমবার রাতে ৬-৭ জন দুর্বৃত্ত দরবার শরীফের ভেতরে প্রবেশ করে প্রথমে গুলি করে এবং পরে গলা কেটে তাঁদের মৃত্যু নিশ্চিত করে পালিয়ে যায়। তবে কী কারণে এ হত্যাকাণ্ড তা জানা যায়নি।
জানা যায়, ফরহাদ হোসেন দিনাজপুর জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক ছিলেন। দিনাজপুর পৌরসভায় মেয়র পদে নির্বাচন করে হেরে যান তিনি।
গত চার বছর ধরে বাংলাদেশের জঙ্গিরা বিদেশি নাগরিক, কথিত পীর, সন্যাসী, ধর্মযাজক, ব্লগারসহ ভিন্নমতাবলম্বীদের হত্যা করছে। গত বছরের ১ জুলাইয়ে গুলশানের হলি আর্টিজানে ভয়াবহ জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় বিদেশি নাগরিকসহ বিপুল সংখ্যক হতাহতের ঘটনার পরে জঙ্গি দমনে কঠোর অবস্থান নেয় সরকার।
পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট একের পর এক জঙ্গি আস্তানায় হানা দিয়ে জঙ্গিদের গ্রেপ্তার করে। বেশ কয়েকজন জঙ্গি পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুক যুদ্ধে নিহত হয়। এ অবস্থায় জঙ্গিরা খানিকটা দমে গিয়েছিল বলে মনে করা হচ্ছিল। কিন্তু কিছুদিনের বিরতিতে গত দু সপ্তাহেই কয়েকটি জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটে। এরপর থেকে প্রায় প্রতিদিনই নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠনের সদস্যদের আটক করছে পুলিশ।
এদিকে এই জোড়া হত্যাকাণ্ডটি এমন সময়ে ঘটল যখন জঙ্গিবাদ দমনে পরামর্শ করতে প্রথমবারের মতো ঢাকায় এসেছেন দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোসহ মোট ১৪ টি দেশের পুলিশপ্রধান ও শীর্ষ কর্মকর্তারা।
প্রথমবারের মতো ঢাকায় এ আন্তর্জাতিক সম্মেলনের আয়োজন করেছে পুলিশের আন্তর্জাতিক সংস্থা ইন্টারপোল ও বাংলাদেশ পুলিশ। রোববার শুরু হওয়া এ সম্মেলনে শেষ হচ্ছে আগামীকাল মঙ্গলবার।
সম্মেলনে বিদেশি অতিথিরা বাংলাদেশে আইএস রয়েছে বলে দাবি করেছেন। সংগঠনটির কথিত মুখপত্র দাবিককে উদ্ধৃত করে হলি আর্টিজানে আইএস হামলা চালিয়েছিল বলে সম্মেলনের প্রথম দিনে দাবি করেন সিঙ্গাপুরের নানিয়াং টেকনোলজিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. রোহান গুনারত্নে।
তবে তাঁর এ দাবিকে গতকাল নাকচ করে দিয়েছেন বাংলাদেশের পুলিশ প্রধান এ কে এম শহীদুল হক।
তাঁর মতে, “হলি আর্টিজানে হামলাকারীরা এদেশে বেড়ে ওঠা জঙ্গি। তবে তাঁদের সঙ্গে আইএসের ইন্টারনেটভিত্তিক যোগাযোগ থাকতে পারে।”
পুলিশের ওই আন্তর্জাতিক সম্মেলনে জঙ্গিবাদ নিয়ে বিশেষ আলোচনার পাশাপাশি তা নির্মূলের কৌশল নিয়ে মত বিনিময় হচ্ছে। এরই মধ্যে এই জোড়া খুন আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীসহ সবাইকে ভাবিয়ে তুলেছে।