বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু এখন বৈশ্বিক গড় আয়ুর চেয়ে বেশি

জেসমিন পাপড়ি
2017.04.25
ঢাকা
একনেক সভায় দেশের মানুষের গড় আয়ু বৃদ্ধির বিষয়টি অবহিত করেন পরিকল্পনা মন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে একনেক সভায় দেশের মানুষের গড় আয়ু বৃদ্ধির বিষয়টি অবহিত করেন পরিকল্পনা মন্ত্রী। এপ্রিল ২৫, ২০১৭।
সৌজন্যে: পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়

গত ৪৫ বছরে বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু ২৪ বছরের বেশি বেড়ে এখন ৭১ দশমিক ৬ বছর, যা বর্তমান বৈশ্বিক গড় আয়ুর চেয়ে বেশি। বিগত বছরগুলোতে সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের ফল হিসেবেই মানুষের গড় আয়ু বেড়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।

মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভা শেষে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ২০১৬ সালের একটি জরিপ প্রতিবেদন উদ্ধৃত করে গড় আয়ু বৃদ্ধির এই তথ্য দেন পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

প্রতিবেদনের তথ্য উদ্ধৃত করে মন্ত্রী আরও জানান, সারা বিশ্বের মানুষের গড় আয়ু ৭১ দশমিক ৪ বছর। সেই হিসাবে সারা বিশ্বের মানুষের গড় আয়ুর চেয়ে বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু বেশি।

প্রসঙ্গত, বিবিএস প্রতিবছর মনিটরিং দ্য সিচুয়েশন অব ভাইটাল স্ট্যাটেসটিকস প্রতিবেদনে মানুষের গড় আয়ুসহ বিভিন্ন বিষয় প্রকাশ করে থাকে। বিবিএস এর আগের বছরের হিসাবে বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু ছিল ৭০ দশমিক ৯ বছর।

এদিকে বিশ্বব্যাংকের এক হিসাব বলছে, গত ৪৫ বছরে দেশের মানুষের গড় আয়ু বেড়েছে ২৪ বছর। যা বৈশ্বিক গড় আয়ু বাড়ার দ্বিগুণ। বিশ্বব্যাংকের হিসাবে, ১৯৭১ সালে দেশের মানুষের গড় আয়ু ছিল ৪৭ বছর। আর ২০১৬ সালে তা হয় ৭১ বছর।

বিশ্লেষকদের মতে, এটি মাতৃমৃত্যু ও শিশুমৃত্যুর হার কমানো, গ্রাম পর্যন্ত টিকা পৌঁছে দেওয়া, সবার জন্য পুষ্টি, শিক্ষা নিশ্চিত করাসহ যে সকল পদক্ষেপ সরকার নিয়েছে তার সুফল এবং ধারাবাহিকতা।

এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ বেনারকে বলেন, “দেশে শিশুমৃত্যু ও মাতৃমৃত্যু হার আগের চেয়ে কমে এসেছে। গড় আয়ু বৃদ্ধিতে এটি সরাসরি অবদান রাখছে।”

তাঁর মতে, “সরকারের উদ্যোগে দেশে শিক্ষার হার বেড়েছে, সর্বস্তরের নারীর ক্ষমতায়ন হচ্ছে। এতে করে মানুষ সচেতন হয়ে উঠছে। ফলে অপুষ্টি হ্রাস, পোলিও নির্মূলসহ নানা সংক্রামক রোগে মৃত্যু হার কমে এসেছে। এসবেরই ফলাফল হিসেবে দেশের মানুষের গড় আয়ু বৃদ্ধি পাচ্ছে।”

এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পপুলেশন সায়েন্সেস বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. আমিনুল হক বেনারকে বলেন, “সরকারের পক্ষ থেকে সামাজিকভাবে গ্রামীণ, নগর কিংবা শহরের উন্নয়ন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পুষ্টি, ক্ষুধা নিবারণের ক্ষেত্রে যে পদক্ষেপগুলো সেক্টরভিত্তিক নেওয়া হয়েছে, সেগুলোর প্রভাব দেখা যাচ্ছে আয়ুর ক্ষেত্রে। এটাই চলমান ধারা।”

গড় আয়ু বৃদ্ধির ইতিবাচক প্রতিফলন মানব সম্পদ উন্নয়নের মতো আন্তর্জাতিক সূচকেও দেখা যাচ্ছে বলে জানান তিনি।

এদিকে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) মানব উন্নয়ন সূচকে বাংলাদেশ তিন ধাপ এগিয়েছে। গত ৫ এপ্রিল পরিকল্পনা কমিশন ও ইউএনডিপি যৌথভাবে প্রকাশিত ‘মানব উন্নয়ন প্রতিবেদন-২০১৬’ প্রকাশ অনুষ্ঠানে এ তথ্য দেওয়া হয়। গড় আয়ু বৃদ্ধি, মাথাপিছু আয়সহ সামাজিক বিভিন্ন সূচকে বাংলাদেশ উন্নতি করেছে বলে এতে জানানো হয়।

“গড় আয়ুর সুফল কাজে লাগাতে এই কর্মক্ষম অধিক জনগোষ্ঠীকে দেশের বিভিন্ন খাতের কর্মে নিয়োজিত করতে হবে। এ ছাড়া গড় আয়ু বৃদ্ধির এই ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে সরকারের চলমান পদক্ষেপগুলোকে চালু রাখতে হবে,” বেনারকে বলেন অধ্যাপক আমিনুল হক।

বিবিএসের প্রতিবেদন বলছে, বাংলাদেশে পুরুষদের চেয়ে নারীরা গড়ে আড়াই বছর বেশি বাঁচেন। নারীদের গড় আয়ু ৭২ দশমিক ৯ বছর এবং পুরুষদের ৭০ দশমিক ৩ বছর। এক বছরের ব্যবধানে নারী ও পুরুষ-উভয়ের গড় আয়ু কিছুটা বেড়েছে।

এই বিষয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, “নারীদের অসুখ-বিসুখ কিছুটা কম হয়। পুরুষদের নানা ধরনের চাপ নিতে হয়। সেই তুলনায় নারীদের কম চাপ নিতে হয়। এ জন্য পুরুষদের তুলনায় নারীরা বেশি দিন বাঁচেন।”

মানুষের গড় আয়ু বৃদ্ধিকে দেশের জন্য ইতিবাচক বলে মন্তব্য করেন মন্ত্রী।

সূত্র জানায়, সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে মালদ্বীপের মানুষের গড় আয়ু সবচেয়ে বেশি। ১৯৭১ সালে দেশটির গড় আয়ু ৪৪ বছর থাকলেও এখন তা ৭৬ বছর।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।