ভিন্ন ঠিকানায় জঙ্গি হামলার সাক্ষী হলি আর্টিজান
2017.01.12

ঢাকার গুলশান অ্যাভিনিউয়ের র্যাংগস আর্কেডের চেইন শপের একপাশে চালু হয়েছে হলি আর্টিজান বেকারি। মাত্র ৫০০ বর্গফুট জায়গায় দুটি টেবিল, গোটা কয়েক চেয়ার আর দুটি বেঞ্চ নিয়ে যাত্রা শুরু করা এই রেস্তোরাঁটি ঘিরে মানুষের আগ্রহের কমতি নেই।
গত বছরের ১ জুলাই ভয়াবহ জঙ্গি হামলার পর বন্ধ হয়ে গিয়েছিল কূটনৈতিক এলাকার জনপ্রিয় এ রেস্তোরাঁটি। তবে পুরোনো সব স্মৃতি ভুলে ছয় মাসেরও বেশি সময় পর গুলশানেরই প্রাণকেন্দ্রে ভিন্ন ঠিকানায় আবারও চালু হয়েছে এটি।
আর এ খবর শুনে ফিরতে শুরু করেছেন পুরোনো গ্রাহকেরা। কোনো ধরনের নিরাপত্তা শঙ্কা নেই বলেই জানিয়েছেন তাঁরা।
স্বল্প পরিসরে শুরু করলেও শিগগিরই হলি আর্টিজান আগের জনপ্রিয়তা ফিরে পাবে বলে আশা করছেন মালিকপক্ষ।
গত মঙ্গলবার থেকে নতুন ঠিকানায় এটি চালু হলেও প্রথম দিন থেকেই ক্রেতাদের ভিড় রয়েছে বলে জানান রেস্তোরাঁর কর্মচারীরা। গতকাল বৃহস্পতিবার সরেজমিন দেখে এর প্রমাণ মেলে।
নতুন ক্রেতাদের পাশাপাশি পুরোনো ক্রেতাদের ভিড় লক্ষ করা যায় নতুন রূপের হলি আর্টিজানে। যাদের অনেকেই এসেছেন সহমর্মিতা জানাতে। রেস্তোরাঁতে ঢুকেই পুরোনো কর্মীদের সঙ্গে কুশলবিনিময় করতে দেখা গেলো অনেককেই।
নতুন পথ চলায় রেস্তোরাঁটির জন্য শুভ কামনা জানিয়ে তিনি বলেন, “এখানে কোনো নিরাপত্তা শঙ্কা নেই। তবে আগের রেস্তোরাঁটি ছিল সম্পূর্ণ আলাদা। সেই বাগান সমৃদ্ধ শান্ত, চমৎকার পরিবেশের সঙ্গে তুলনা করতে গেলে এটা কিছুই না। তবু নতুন হলি আর্টিজানকে দেখার আগ্রহে এখানে এসেছি। আমার কয়েকজন বন্ধুও গতকাল এসেছিল।”
তাঁর মতে, গত ১ জুলাই বাংলাদেশে যা ঘটেছে, তা পৃথিবীর অনেক দেশেই প্রতিদিন ঘটছে। তাই একটি দুর্ঘটনার দিকে তাকিয়ে বসে থাকলে চলবে না। টিকে থাকার চেষ্টা করতে হবে। সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে।
প্রসঙ্গত, গুলশান-২ নম্বরের ৭৯ নম্বর সড়কের হলি আর্টিজান বেকারিতে ঢুকে ১৭ বিদেশিসহ ২০ জনকে হত্যা করেছিল একদল জঙ্গি। পরদিন সকালে কমান্ডো অভিযান চালিয়ে ওই রেস্তোরাঁর নিয়ন্ত্রণ নিয়েছিল নিরাপত্তা বাহিনী। ওই ঘটনায় পাঁচজন জঙ্গিই নিহত হয়। এ ছাড়া নিহত হয়েছিলেন রেস্তোরাঁর একজন বাবুর্চিও। সাইফুল ইসলাম চৌকিদার নামের ওই ব্যক্তিকে সরকারের পক্ষ থেকে জঙ্গি বলে ঘোষণা করা হয়েছিল। এর প্রতিবাদ জানিয়েছিল তার পরিবার ও আর্টিজান কর্তৃপক্ষ। তবে সরকার আজও সে অবস্থান থেকে সরে আসেনি।
এখনই পরিসর এর চেয়ে বড় করার চেষ্টা নেই জানিয়ে তিনি বলেন, “এটি ভালো চললে হয়ত আরও বড় করা হবে। তবে সবকিছুর আগে বিবেচনায় নেওয়া হবে নিরাপত্তার বিষয়টি।”
তিনি বলেন, “জঙ্গি হামলা পরবর্তী পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠতে মানসিক যন্ত্রণাই প্রধান চ্যালেঞ্জ ছিল। একটা সময় আমরা ভেবেছিলাম দেশ ছেড়ে চলে যাব। দেশকে নিরাপদ মনে হয়নি। তবে ধীরে ধীরে সে মনোভাব পরিবর্তন হয়েছে।”
এর কৃতিত্ব আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে দিয়ে আরসালান বলেন, তাঁরাই কঠোরভাবে জঙ্গি দমনের মাধ্যমে আমাদের আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে এনেছেন।
তাঁর মতে, এখন দেশবাসী বিশ্বাস করে যে, এ দেশে আর কোনও ১ জুলাই ফিরে আসবে না।
তবে জঙ্গি হামলার পর থেকে রেস্তোরাঁটি নতুন করে চালু করার আগ পর্যন্ত আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ সম্পর্কে কথা বলতে রাজি হননি মালিকপক্ষ।
এ প্রসঙ্গে মালিক সাদাত মেহেদী আক্ষেপ করে বলেন, “আর্থিক ক্ষতিটা আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ নয়। কতগুলো জীবন চলে গেছে ওই ঘটনায়। আমরা শুধু এখন আমাদের জীবনটাকে স্বাভাবিক করতে চাই।”
তবে গুলশান হামলা বিচ্ছিন্ন ঘটনা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “আমরা এখন সম্পূর্ণ নিরাপদ বোধ করছি। গুলশানের প্রাণকেন্দ্রে হওয়ায় যথেষ্ট নিরাপত্তাও রয়েছে এখানে।”
রেস্তোরাঁটি পুনরায় চালু করতে আরেক ব্যবসায়ী বন্ধু তাকে জায়গা দিয়ে সহায়তা করেছেন বলে তিনি জানান।
নতুন সে স্থানে, নতুন রূপে চালু করলেও রেস্তোরাঁটিতে অধিকাংশ পুরোনো কর্মীদের ফেরত আনা হয়েছে বলে জানান সাদাত মেহেদী।
তিনি বলেন, “প্রায় ৯৫ শতাংশ পুরোনো কর্মচারীকে আমরা ফেরত আনতে পেরেছি। ৫-১০ জন অন্য চাকরিতে চলে গেছে। তা ছাড়া আমাদেরও অবস্থা ভালো ছিল না। যেকোনোভাবে আমরা ম্যানেজ করেছি।”
জঙ্গি হামলার ঘটনায় নিহত বাবুর্চি সাইফুল ইসলাম চৌকিদার পরিবারকে হলি আর্টিজেনের পক্ষ থেকে প্রতি মাসে আর্থিক সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে বলেও তিনি জানান।
এ প্রসঙ্গে সাদাত মেহেদী বলেন, “তাঁকে কেন জঙ্গি বলা হয়েছিল সে প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে চাই না। তবে তিনি স্ত্রী এবং তিন বাচ্চাকে রেখে গেছেন। এ কোম্পানি যত দিন থাকবে, তাঁর পরিবার তার বেতনের অর্থ পেয়ে যাবেন।”
নতুন শুরু করা হলি আর্টিজানের জন্য শুভ কামনা জানিয়েছে আশপাশের প্রতিষ্ঠানগুলোও। পাশের দোকান ভ্যালেন্সিয়া ফার্নিসিং লিমিটেডের পরিচালক আব্দুল আজিজ বেনারেকে বলেন, “গুলশান হামলা ছিল একটা দুর্ঘটনা। এটা যেকোনো প্রতিষ্ঠানেই এমন হামলা ঘটতে পারত। আশা করি প্রতিষ্ঠানটি ঘুরে দাঁড়াবে।”