হাসনাতের জামিন আবার নাকচ, ৬ মাসেও অভিযোগ গঠন হয়নি

ঢাকা থেকে জেসমিন পাপড়ি
2017.01.04
গ্রেপ্তার হওয়ার পর হাসনাত করিম গ্রেপ্তার হওয়ার পর হাসনাত করিম (মাঝখানে), আগস্ট ২০১৭।
স্টার মেইল

গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় ভয়াবহ জঙ্গি হামলার ঘটনায় আটক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক ও ব্রিটিশ নাগরিক হাসনাত করিমের জামিন আবেদন আবারও নাকচ করেছে ঢাকার একটি আদালত। এই নিয়ে চতুর্থবারের মতো তাঁর জামিন আবেদন নাকচ হলো।

দেশে–বিদেশে আলোচিত ওই জঙ্গি হামলার ঘটনার ছয় মাস পরও হাসনাত করিমের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়নি। কবে নাগাদ অভিযোগপত্র জমা হতে পারে এমন প্রশ্নের জবাবে সংশ্লিষ্ট আদালতের সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা (জিআরও) ও পুলিশের উপ পরিদর্শক (এসআই) ফরিদ হোসেন বেনারকে বলেন, “এটা সঠিকভাবে বলা কঠিন। কারণ, এটা এখন রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্ত।”

সুনির্দিষ্টভাবে অভিযোগ প্রমাণ না হলেও একের পর এক জামিন আবেদন নাকচ হওয়ায় হতাশ হয়ে পড়েছে তাঁর পরিবার। এ বিষয়ে আক্ষেপ করে হাসনাত করিমের স্ত্রী শারমিন করিম বেনারকে বলেন, “বাবার একমাত্র ছেলে সে। অনেক আশা করেছিলাম শেষবারের মতো তাকে বাবার লাশ দেখার অনুমতি দেওয়া হবে। কিন্তু সে সময় তাকে প্যারোলে মুক্তি দেওয়া হয়নি।”

উল্লেখ্য, হাসনাতের বাবা রেজাউল করিম সম্প্রতি মারা যান। একমাত্র ছেলেকে মুক্ত করার জন্য তিনি ছোটাছুটি করেছিলেন।

“আমরা ন্যায় বিচার পাবো কিনা, তাও জানি না,” সংশয় প্রকাশ করে বলেন শারমিন।

এ বিষয়টির সমালোচনা করেছেন মানবাধিকার কর্মীরাও। এ প্রসঙ্গে আইন ও সালিশ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী পরিচালক নূর খান লিটন বেনারকে বলেন, “সাম্প্রতিককালে লক্ষ করা যাচ্ছে, জঙ্গি সন্দেহের অভিযোগে মামলা হলে, কেন যেন বিষয়টাকে পুরোপুরি খতিয়ে দেখা হয় না। অনেকক্ষেত্রে এক বাক্যেই জামিন নাকচ করে দেওয়া হয়।”

তাঁর মতে, প্রকৃত জঙ্গি যাতে ছাড়া না পায় সেদিকে যেমন খেয়াল রাখতে হবে, তেমনি জঙ্গি না হলে যাতে কেউ হয়রানির শিকার না হয় সেই বিবেচনা করাও জরুরি।

গতকাল বুধবার ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে জামিনের আবেদন করেন হাসনাতের আইনজীবী ব্যারিস্টার মঈনুল হোসেন। তিনি বেনারকে বলেন, “হাসনাত করিমের নাম মামলার এজাহারে ছিল না। এ ছাড়া তিনি দীর্ঘদিন জেল-হাজতে আছেন। এই দুটি বিবেচনায় আমরা জামিন চেয়েছিলাম।”

তবে রাষ্ট্রপক্ষ এ আবেদনের বিরোধীতা করে। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে আদালত জামিন আবেদন নাকচ করে দেন। হাসনাত করিমকে গতকাল আদালতে হাজির করা হয়নি।

এ বিষয়ে এসআই ফরিদ হোসেন বেনারকে বলেন, “আমরা আদালতকে বলেছি, হাসনাত করিমের বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রমাণ এখনো মেলেনি। তবে বিষয়টি তদন্তাধীন। সরাসরি সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত না থাকলেও তাঁর বিরুদ্ধে প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।”

এ ছাড়া তাঁর বিরুদ্ধে সন্ত্রাস দমন আইনের অন্তত আটটি ধারায় অভিযোগ রয়েছে বলেও জানান তিনি।

গত ১ জুলাই গুলশানের হলি আর্টিজানে হামলা চালিয়ে ১৭ বিদেশি নাগরিকসহ ২০ জনকে নৃশংসভাবে হত্যা করে জঙ্গিরা। সেদিন জঙ্গিদের বোমার আঘাতে পুলিশের দুই কর্মকর্তাও নিহত হন।

পরদিন সকালে সেনা নেতৃত্বে পরিচালিত যৌথ অভিযানে হামলাকারী পাঁচ জঙ্গিসহ ছয়জন নিহত হয়। ওই রেস্তোরাঁ থেকে অভিযানের আগে ও পরে ৩২ জন জিম্মিকে উদ্ধার করা হয়। তাঁদের মধ্যে হাসনাত করিম ও তাহমিদ হাসিব খানকে আটক করে পুলিশ। প্রায় একমাস নিখোঁজ থাকার পর গত ৩ আগস্ট ওই দুজনকে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।

পরে জামিনে মুক্তি পায় কানাডার নাগরিক তাহমিদ। ৫৪ ধারা থেকেও দুজনকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। তবে কয়েক দফায় হাসনাত করিম জামিন আবেদন করলেও বারবারই তা নাকচ করেছে আদালত। তাকে কয়েক দফা রিমান্ডেও নেওয়া হয়েছে।

গুলশানের হলি আর্টিজানে হামলার এক সপ্তাহের মাথায় গত ৭ জুলাই শোলাকিয়ায় আরো একটি জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটে। এ দুটি হামলার পরপরই জঙ্গি দমন অভিযানে নামে বাংলাদেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। গত ছয় মাসে আটটি জঙ্গি আস্তানায় অভিযানে নিহত হয়েছে মোট ২৮ জন নব্য জেএমবির সদস্য। এ ছাড়া গুলশান হামলার পর অভিযানে ৫ জন এবং শোলাকিয়ার হামলার পর অভিযানে একজন জঙ্গি মিলে সর্বমোট নিহত সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩৪ জন।

এর মধ্যে সর্বশেষ অভিযানটি পরিচালিত হয় গত ২৪ ডিসেম্বর রাজধানীর আশকোনায়। ওই অভিযানের সময় এক নারী আত্মঘাতী এবং এক কিশোর নিহত হয়।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।