ঢাকার মেয়র নির্বাচন ঘিরে জাতীয় নির্বাচনের উত্তাপ
2018.01.09
ঢাকা

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে উপ নির্বাচনের জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে তফসিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আগামী ২৬ ফেব্রুয়ারি এ উপ নির্বাচনসহ উত্তর ও দক্ষিণ সিটির নতুন ৩৬টি সাধারণ ওয়ার্ড ও ১২টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডের নির্বাচনও অনুষ্ঠিত হবে।
মঙ্গলবার রাজধানীর নির্বাচন কমিশন ভবনে তফসিল ঘোষণা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এম নূরুল হুদা।
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময়ও অতি সন্নিকটে। এর আগে আরও বেশ কয়েকটি স্থানীয় সরকার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও রাজধানীর এই উপ নির্বাচনকে ঘিরে জাতীয় নির্বাচনের আবহ তৈরি হচ্ছে বলে মনে করছেন ভোটার ও রাজনীতি বিশ্লেষকেরা।
“লজিস্টিক দিক থেকে জাতীয় নির্বাচনের সঙ্গে স্থানীয় নির্বাচনের বিরাট পার্থক্য থাকলেও এই উপ নির্বাচনটা রাজধানীতে হচ্ছে বলে সারা দেশের মানুষ এর দিকে তাকিয়ে থাকবে। আন্তর্জাতিক সংগঠন, নির্বাচনের অন্যান্য অংশীদাররাও এ নির্বাচন কেমন হয় সেদিকে নজর রাখবে। সে বিবেচনায় ঢাকার এ উপ নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ,” বেনারকে বলছিলেন ইলেকশন ওয়ার্কিং গ্রুপের (ইডব্লিউজি) পরিচালক ড. আবদুল আলিম।
তা ছাড়া জাতীয় নির্বাচনও সন্নিকটে হওয়ায় রাজনৈতিক দলগুলোর জন্যও একটি চাপ হতে পারে বলে মনে করেন তিনি।
রাজধানীতে এ নির্বাচন করা ইসির জন্যও বড় চ্যালেঞ্জ জানিয়ে এ নির্বাচনকে আলাদা গুরুত্ব দিয়ে দেখা হবে বলে জানিয়েছেন সিইসি নুরুল হুদা। সকল রাজনৈতিক দল এ নির্বাচনে অংশ নেবে এবং শেষ পর্যন্ত থাকবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
দলগুলোর জন্য বড় চ্যালেঞ্জ
এবারই প্রথম সিটি করপোরেশন নির্বাচনের প্রার্থীরা দলীয় মনোনয়নে আর দলীয় প্রতীকে লড়বেন।
তবে রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য এই নির্বাচন একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. নেহাল করিম।
তিনি বেনারকে বলেন, “আসনটা যেহেতু আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীর দখলে ছিল, সুতরাং দলটি চাইবে পুরোনো শক্তি যোগ করে এ নির্বাচনে জিততে। অন্যান্য দলগুলোও বিশেষ করে বিএনপি চাইবে নিজেদের প্রার্থীকে জিতিয়ে আনতে।”
“তবে সরকারি দল কোনোভাবেই এই নির্বাচনে প্রভাব খাটাবে না। জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে এই নির্বাচন কমিশনকে কোনোভাবেই তারা বিতর্কিত করতে চাইবে না,” মনে করেন ড. নেহাল করিম।
উত্তর সিটি করপোরেশনের ভোটার আরিফুর রহমান বেনারকে বলেন, “দলগুলোর জন্য এই নির্বাচন অবশ্যই জনমত যাচাইয়ের বিরাট এক সুযোগ, রাজধানীতে প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকে এই নির্বাচন হচ্ছে এবং সেটা জাতীয় নির্বাচনের আগে। রাজধানীর ওপর নির্ভর করে সারা দেশে দলের অবস্থান,”
“সুতরাং যে দলের প্রার্থী এ নির্বাচনে জয়ী হবে, তারাই জাতীয় নির্বাচনে কিছুটা হলেও এগিয়ে থাকবে। তবে সবকিছু নির্ভর করবে সুষ্ঠু নির্বাচনের উপর।"
মঙ্গলবার নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, ঢাকা উত্তর সিটির উপনির্বাচনে প্রার্থী হতে আগামী ১৮ জানুয়ারি পর্যন্ত আবেদন জমা দেওয়া যাবে এবং ২৯ জানুয়ারি মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিন। ২১ ও ২২ জানুয়ারি মনোনয়নপত্র বাছাই হবে।
এর আগে ২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিল অনুষ্ঠিত ঢাকা উত্তর সিটির নির্বাচনে মেয়র পদে জয়ী হন আনিসুল হক। গত বছরের ৩০ নভেম্বর তার মৃত্যুতে এ পদটি শূন্য হয়।
গত ১ ডিসেম্বর থেকে মেয়র পদটি শূন্য ঘোষণা করে স্থানীয় সরকার বিভাগ। আইন অনুযায়ী এর ৯০ দিন অর্থাৎ আসছে ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে এ উপ নির্বাচন করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। উত্তর সিটি করপোরেশনের মোট ৫৪টি ওয়ার্ডে ভোটার সংখ্যা ২৯ লাখ ৪৮ হাজার ৫১০ জন।
দলগুলো তৎপর
ঢাকা উত্তর সিটির উপ নির্বাচনকে ঘিরে ইতিমধ্যেই রাজনৈতিক দলগুলোর তৎপরতা দেখা যাচ্ছে। অধিকাংশ দলই এ নির্বাচনে প্রার্থী দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। দেশের প্রধান দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি ইতিমধ্যেই প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে বলে দলগুলোর ঘনিষ্ঠ সূত্রে জানা গেছে। যদিও দলগুলোর পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা এখনো পাওয়া যায়নি।
আনিসুল হকের মতোই আরেক ব্যবসায়ী নেতা আতিকুল ইসলাম আওয়ামী লীগের মনোনয়নের প্রত্যাশায় ইতিমধ্যে নির্বাচনী প্রচারণা নেমেছেন। তিনি দলটির সবুজ সংকেত পেয়েছেন। আর ক্ষমতাসীনদের রুখতে একক প্রার্থী দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট।
“ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে ২০ দলীয় জোটের একজন অভিন্ন প্রার্থী হবেন। এ নিয়ে অনেক বিভ্রান্ত সৃষ্টি করা হবে। তবে আমরা সবাই একত্রে লড়াই করে শেখ হাসিনার সিংহাসন ধুলায় লুটিয়ে দেবো,” মঙ্গলবার জাতীয় প্রেসক্লাবে এক অনুষ্ঠানে বলেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
তবে সারা দেশে নৌকার জোয়ার শুরু হয়েছে বলে মনে করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
রংপুরে এক অনুষ্ঠানে তিনি আরো বলেন “আগামীতে রংপুরের মতো নিরপেক্ষ, স্বাধীন ও কর্তৃত্বপূর্ণ নির্বাচন হবে। সরকার কোনো হস্তক্ষেপ করবে না।”
এদিকে নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধন না থাকায় জোটের শরিক জামায়াতে ইসলামী দলীয় প্রতীকে আলাদা প্রার্থী দিতে পারবে না। সে ক্ষেত্রে জোটের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নের দৌড়ে এগিয়ে রয়েছেন গতবারের মেয়র প্রার্থী ও বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা তাবিথ আউয়াল।
এ ছাড়া আসন্ন উপ নির্বাচন নিয়ে নড়েচড়ে বসেছে বাম দলগুলোও। গত নির্বাচনের মতো সিপিবি, গণসংহতি আন্দোলনের মতো দলও প্রার্থী দিতে পারে বলে শোনা যাচ্ছে। এ ছাড়া এনডিএম, যুক্তফ্রন্টেরও মতো জোটও প্রার্থী দিতে পারে।