হঠাৎ বেড়েছে মাদকবিরোধী ‘বন্দুকযুদ্ধ’, দুদিনে নিহত ৮
2018.07.11
ঢাকা
দেশ-বিদেশে কড়া সমালোচনার মুখে মে মাসের মাঝামাঝি শুরু হওয়া অবৈধ মাদকের বিরুদ্ধে অভিযানে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ প্রাণহানির ঘটনা জুন মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে কমে আসে। তবে, মঙ্গলবার ও বুধবার দুদিনে সারা দেশে র্যাব ও পুলিশের সাথে কথিত বন্দুকযুদ্ধে আট ব্যক্তি নিহত হয়েছেন।
এর মধ্যে বুধবার চারজন ও গত মঙ্গলবার আরও চারজন পৃথক ‘বন্দুকযুদ্ধে’ প্রাণ হারিয়েছেন বলে জানিয়েছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। পুলিশ-র্যাব বলছে, নিহতদের প্রায়ই সবাই মাদক ব্যবসায়ী অথবা দাগি অপরাধী।
তবে মানবাধিকার কর্মীরা চলমান মাদক বিরোধী অভিযানে নিহত হওয়ার ঘটানগুলোকে ‘বন্দুকযুদ্ধ’ না বলে ‘বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড’ বলছেন।
আইন ও সালিস কেন্দ্রের সাবেক নির্বাহী পরিচালক নূর খান বেনারকে বলেন, “আমাদের দেশে যেসব ঘটনাকে বন্দুকযুদ্ধ বলা হয় সেগুলোর সব বন্দুকযুদ্ধ নয়। অনেক বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা তদন্ত করে দেখা গেছে সেখানে এমন কোনো ঘটনাই ঘটেনি। অথচ বলা হয় যে, র্যাব-পুলিশের ওপর অপরাধীরা গুলি চালিয়েছিল।”
তাঁর মতে, এ ধরনের বন্দুকযুদ্ধের পর যেসব অস্ত্র-গোলাবারুদ উদ্ধার দেখানো হয় সেগুলো অত্যন্ত নিম্নমানের। দেশীয় এসব অস্ত্র দিয়ে অপরাধীরা আধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত পুলিশ-র্যাবকে আক্রমণ করার সাহস পাবে না। তাই এই গল্প বিশ্বাসযোগ্য নয়।
তবে সরকারের পক্ষ থেকে তা অস্বীকার করে বলা হচ্ছে, কোনো ‘বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড’ সংঘঠিত হয়নি। বরং অপরাধীরা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের ওপর আক্রমণ করলে তাঁরা আত্মরক্ষায় গুলি চালায়, এতে অপরাধীদের মৃত্যু হয়।
গত ২২ মে এক রাতে সারা দেশে ১১ জন অভিযুক্ত মাদক ব্যবসায়ী নিহত হন। মাদকে বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্সকে’ স্বাগত জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত রাষ্ট্রগুলো ‘বন্দুকযুদ্ধের’ ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়ে তা বন্ধের আহ্বান জানায়। তারা প্রতিটি প্রাণহানির ঘটনা তদন্তের আহ্বান জানান।
‘বন্দুকযুদ্ধের’ ঘটনায় টেকনাফ পৌরসভার কাউন্সিলর একরামুল হক নিহত হওয়ার ঘটনায় র্যাব একটি বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।
এছাড়া, মাদক বিরোধী অভিযানে নিহত হওয়ার কোনো ঘটনাই তদন্ত করার ঘোষণা দেয়নি সরকার।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বেনারকে বলেছেন, “আমরা মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রাখব। মাদক আমাদের দেশের যুব সমাজকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। এই অভিযানে দেশের মানুষের সমর্থন আছে।”
মে মাসের মাঝামাঝি শুরু হওয়া চলমান মাদক বিরোধী অভিযানে গত ৫৭ দিনে দেশের বিভিন্ন স্থানে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ ১৭০ মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন।
এছাড়া এ বছর জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত ৩৫ হাজার মানুষকে মাদক সংশ্লিষ্ট মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে এক প্রশ্নের উত্তরে চলমান অধিবেশনে সংসদকে জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
এই ব্যাপক গ্রেপ্তারের ফলে দেশের ৬৮টি জেলখানায় সংকট দেখা দিয়েছে। বাংলাদেশের জেলখানার ধারণ ক্ষমতা প্রায় ৩৬ হাজার।
দুদিনের প্রাণহানি
বুধবার কুষ্টিয়ায় র্যাবের সাথে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ দুজন ‘মাদক ব্যবসায়ী’ নিহত হন। ওই দিন পুলিশের সাথে পৃথক ‘বন্দুকযুদ্ধের’ ঘটনায় লক্ষ্মীপুর ও ঢাকায় আরও দুজন প্রাণ হারান বলে নিশ্চিত করেছে পুলিশ-র্যাব।
মঙ্গলবার দিবাগত রাত দুইটা থেকে চারটার মধ্যে অর্থাৎ বুধবার প্রথম চার ঘণ্টার মধ্যে ঢাকা, কুষ্টিয়া ও লক্ষ্মীপুর পৃথক ‘বন্দুকযুদ্ধে’ চার ‘মাদক ব্যবসায়ী’ নিহত হয়েছেন।
র্যাবের মিডিয়া শাখার প্রধান মুফতি মাহমুদ খান বুধবার বেনারকে বলেন, গত ৪৮ ঘণ্টায় পৃথক বন্দুকযুদ্ধে কুষ্টিয়ায় দুজন এবং ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও নাটোরে একজন করে কমপক্ষে পাঁচজন ‘মাদক ব্যবসায়ী’ নিহত হয়েছেন।
এসব ‘বন্দুকযুদ্ধের’ প্রতিটি ক্ষেত্রেই ঘটনাস্থল থেকে অস্ত্র, গোলাবারুদ ও মাদকদ্রব্য উদ্ধারের কথা জানিয়েছে পুলিশ ও র্যাব।