আলোকচিত্রী শহিদুল আলমের মামলার তদন্ত স্থগিত
2019.03.14
ঢাকা

আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন আলোকচিত্রী ও দৃক গ্যালারির প্রতিষ্ঠাতা ড. শহিদুল আলমের বিরুদ্ধে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের বিতর্কিত ৫৭ ধারায় দায়ের করা মামলার ‘তদন্ত কার্যক্রম’ তিন মাসের জন্য স্থগিত করেছে হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ।
শহিদুলের করা রিট আবেদনের ওপর চার দিনের শুনানি শেষে বৃহস্পতিবার এই আদেশ দেন বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের সমন্বয়ে গঠিত আদালত।
গত বছর জুলাই মাসে ‘নিরাপদ সড়ক’ আন্দেলন চলাকালে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘মিথ্যা তথ্য দিয়ে সহিংসতা উসকে’ দেওয়ার অভিযোগে পুলিশের করা মামলার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিটটি করেছিলেন তিনি।
মামলাটি কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, এবং মামলাটি সংবিধানের সাথে কেন সাংঘর্ষিক নয় সেবিষয়েও ব্যাখ্যা করতে সরকারের প্রতি রুল জারি করেছে আদালত।
রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে অংশ নেওয়া অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বেনারকে বলেন, “আমরা এই আদেশের ওপর স্থগিত আদেশ চেয়ে আপিল বিভাগে যাব।”
তাঁর বিপক্ষে দাঁড়ানো ব্যারিস্টার সারা হোসেন বেনারকে বলেন, “তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের বিতর্কিত ৫৭ ধারায় শহিদুল আলমের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।”
শহিদুলের পক্ষে সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এএফ হাসান আরিফও শুনানিতে অংশ নেন।
মামলা নষ্ট হয়ে গেছে: সারা হোসেন
সারা হোসেনের মতে, বিলুপ্ত ৫৭ ধারায় দায়ের হওয়ার কারণে মামলাটি আর চলতে পারে না।
“আমাদের মূল বক্তব্য ছিল যে শহিদুলের বিরুদ্ধে যে সময় মামলাটি হয় তখন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন ছিল। মাঝখানে ওটার ৫৭ ধারা বাতিল হয়ে গেছে, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন হয়েছে,” বলেন তিনি।
সারার দাবি, “নতুন আইনে বলা হয়েছে, সাইবার ট্রাইবুনালে সূচিত বা গৃহীত কোনো মামলা থাকলে সেগুলো চলবে। অন্য কিছু চলার এখতিয়ার নতুন আইনে রাখা হয়নি।”
শহিদুলের মামলাটা এখনো তদন্তাধীন অবস্থায় রয়েছে, সাইবার ট্রাইবুনালে যায়নি উল্লেখ করে তিনি বলেন, “মামলাটি যেহেতু পাকেনি সেহেতু এটি নষ্ট হয়ে গেছে। আইন অনুযায়ী তদন্ত চলার কোনো উপায় নেই।”
এরই প্রেক্ষিতে হাইকোর্ট থেকে মামলাটির তদন্ত তিন মাসের জন্য স্থগিত আদেশ দেওয়া হয় বলেও জানান এই আইনজীবী।
তদন্ত চলতে পারে: রাষ্ট্রপক্ষ
তবে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বেনারকে বলেন, “আমাদের যুক্তি ছিল, ‘প্রসিডিং’ বলতে তদন্তও বুঝায়। তদন্তও আইনী প্রক্রিয়ার অংশ। তাই মামলাটি চলতে পারে, তদন্তও চলতে পারে।”
আদালতকে তিনি বলেন, “আইনের কোনো ধারা বাতিল হওয়া বড় কথা নয়। আমাদের দেখতে হবে অপরাধটি সংগঠিত হয়েছে কিনা। এটা বিবেচনায় মামলার তদন্ত চলতে পারে।”
“আপিল বিভাগ যদি হাইকোর্টের আজকের আদেশটি স্থগিত না করে সেক্ষেত্রে আজকের আদেশের ফলে আগামী তিন মাসের মধ্যে হাইকোর্টের কাছে সরকারকে জবাব দিতে হবে,” বেনারকে বলেন ঢাকা বারের সদস্য জীবনান্দ জয়ন্ত।
পরে সেই জবাবের ওপর শুনানি অনুষ্ঠিত হবে জানিয়ে তিনি বলেন, “ওই শুনানিতে যদি সরকারের ব্যাখ্যা গৃহীত না হয় তাহলে শহিদুল আলমের মামলার তদন্ত বন্ধ হয়ে যাবে। আর তদন্ত বন্ধ হয়ে গেলে এই মামলার কোনো ভবিষ্যত নেই।”
ফিরে দেখা: ঘটনাকাল
গত বছর ২৯ জুলাই নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের সময় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লাইভে এসে আন্দোলন সম্পর্কে ‘পোস্ট’ দেন শহিদুল আলম।
একইসাথে তিনি আল-জাজিরা চ্যানেলে দেওয়া সাক্ষাতকারে আওয়ামী লীগ সরকারের কার্যক্রমের সাথে নিরাপদ সড়ক আন্দোলনকে যুক্ত করে বক্তব্য দেন এবং শেখ হাসিনার সরকারকে ‘অনির্বাচিত’ বলে মন্তব্য করেন।
পরদিন ৬ আগস্ট তাঁকে পুলিশ তাঁর বাসা থেকে তুলে নিয়ে যায়। মামলা হয় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারায়।
আদালতে তোলা হলে তাঁর সাতদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের আদালত। রিমান্ড শেষে পাঠিয়ে দেয়া হয় কারাগারে।
নিম্ন আদালতে দফায় দফায় জামিন বাতিল হওয়ার পর হাইকোর্ট থেকে জামিনের আবেদন করেন তাঁর আইনজীবী। সেখানে অনেক নাটকীয়তার পর ১৫ নভেম্বর জামিন মেলে হাইকোর্ট থেকে।
২০ নভেম্বর কারাগার থেকে বেরিয়ে আসেন এই আলোকচিত্রী।
অবশেষে ৩ মার্চ মামলাটির বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিট আবেদন করেন শহিদুল আলম। গত সোমবার থেকে চারদিন টানা শুনানির পর বৃহস্পতিবার তদন্ত কার্যক্রম স্থগিত করেন আদালত।