একতরফা নির্বাচনে ঢাকা উত্তরের মেয়র ব্যবসায়ী নেতা আতিক

শরীফ খিয়াম
2019.02.28
ঢাকা
190228_city_Election_1000.JPG উত্তরার নওয়াব হাবিবুল্লা মডেল স্কুল ও কলেজ কেন্দ্রে ভোট দেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী আতিকুল ইসলাম। ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৯।
[বেনারনিউজ]

প্রধান বিরোধী দল বিএনপির বর্জনের মুখে বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত নিরুত্তাপ ও একতরফা নির্বাচনে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র হলেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ও ব্যবসায়ী নেতা আতিকুল ইসলাম।

পোশাক প্রস্তুত ও রফতানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সাবেক সভাপতি আতিকের পূর্বসূরী প্রয়াত মেয়র আনিসুল হকও প্রথমে বিজিএমইএ এবং পরবর্তীতে বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি (এফবিসিসিআই) এবং সার্ক চেম্বারের সভাপতি ছিলেন।

২০১৭ সালের ৩০ নভেম্বর আনিসুল হকের মৃত্যুর এক বছরের বেশি সময় পরে এই উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হলো।

ঢাকা উত্তরের এক হাজার ২৯৫টি ভোটকেন্দ্রের সবকটির ঘোষিত ফলে আতিকুল ইসলাম পেয়েছেন আট লাখ ৩৯ হাজার ৩০২ ভোট। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী জাতীয় পার্টির শাফিন আহমেদ পেয়েছেন ৫২ হাজার ৪২৯ ভোট।

সকাল আটটা থেকে বিকেল চারটা অবধি ভোটগ্রহণ চলে। মেয়র পদে উপনির্বাচন ছাড়াও ডিএনসিসি’র নতুন ১৮টি ওয়ার্ডে সাধারণ নির্বাচন, দুইটি ওয়ার্ডে উপনির্বাচন এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটির নতুন ১৮টি ওয়ার্ডের সাধারণ নির্বাচনে ভোট গ্রহণ হয়েছে।

বিরোধীদের বয়কটে ‘জৌলুস হারানো’ এ নির্বাচন নিয়ে শুরু থেকেই জনগণের আগ্রহ ছিল শূন্যের কোঠায়। এ ছাড়া বৃষ্টিস্নাত ভোটের দিনে দুই সিটির ভোটকেন্দ্রেই ভোটারশূন্যতা ছিল চোখে পড়ার মতো।

সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বেনারকে বলেন, “এটা একটা ভোটারবিহীন আনুষ্ঠানিকতা হয়েছে। একতরফা নির্বাচন হওয়ার কারণে এর ফলাফল প্রায় পূর্বনির্ধারিত ছিল।”

দুপুরে নয়া পল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, মেয়র কে হবেন তা আগেই নির্ধারিত হয়ে গেছে। আজকে শুধু ফলাফল ঘোষণা করা হবে।

একই সময়ে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেন, “ভোটার উপস্থিতি কম থাকলেও সিটি নির্বাচন শান্তিপূর্ণ হচ্ছে, কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।”

ড. বদিউল বেনারকে বলেন, “আসলে মানুষের মধ্যে নির্বাচন নিয়ে এক ধরনের অনীহা তৈরি হয়েছে। তারা নির্বাচনের ব্যাপারে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে, যা আমাদের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার জন্য কোনোভাবেই ইতিবাচক নয়।”

মেয়র প্রার্থী আনিসুর রহমান দেওয়ান সকাল সাড়ে ১০টায় নয়াটোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দিয়ে বেরিয়ে বলেন, “আমার ভোটকক্ষে আমি সম্ভবত দ্বিতীয় বা তৃতীয় ভোটার।”

এর আগে সকাল সোয়া ১০টায় ভাসানটেক উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দিয়ে বেরিয়ে স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী আব্দুর রহিম বলেন, “এই কেন্দ্রে আমিই প্রথম ভোট দিয়েছি।”

গুলশানের মানারাত ইন্টারন্যাশনাল স্কুল কেন্দ্রে নিজের ভোট দিয়ে শাফিনও বলেন, “আশানুরূপ সাড়া দেখতে পাচ্ছি না ভোটারদের মধ্যে।”

'অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নয়'

মগবাজারের একটি ভোটকেন্দ্র পরিদর্শন শেষে আগারগাঁওয়ের নির্বাচন কমিশন ভবনে ফিরে নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার সাংবাদিকদের বলেন, “রাজনৈতিক পরিচয়ে মেয়র পদে নির্বাচন হচ্ছে। কিন্তু প্রধান বিরোধী দল এতে অংশগ্রহণ না করায় এটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নয়।”

“নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক না হলে ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে যেতে উৎসাহ দেখা যায় না,” যোগ করেন তিনি।

অন্যদিকে ভোটারদের উপস্থিতি কম হওয়ার জন্য রাজনৈতিক দলগুলোকে দায়ী করে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদা বলেন, “দুই সিটির নির্বাচনে ভোটারের উপস্থিতি যে কম, এর দায় ইসির না। দায় প্রার্থী ও রাজনৈতিক দলগুলোরই।”

উত্তরার আইইএস স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভোটকেন্দ্রে নিজের ভোট দেওয়ার পর তিনি আরো বলেন, “নির্বাচন কমিশন (ইসি) ভোটের পরিবেশ তৈরি করে। তারা ভোটার আনে না।”

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ভোট দেওয়ার পর বলেন, “নির্বাচন কমিশনার যেটা বলেছেন, সেটা যথার্থ। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল উদ্ধুদ্ধ করে ভোটারদের কেন্দ্রে নিয়ে আসবে, এটাই স্বাভাবিক। এর মধ্যে কে এলো, আর কে এলো না সেটা তো নির্বাচন কমিশনের দেখার দায়িত্ব নয়।”

তবুও ভোটার উপস্থিতি কম হওয়ার পেছনে দুটো কারণ ব্যক্ত করেছেন সিইসি। “একটি কারণ হলো, এ নির্বাচনের মেয়াদ অল্প দিনের। ফলে ভোটারদের আগ্রহ কম। আবার এখানে সব দল অংশ নেয়নি। এতেও উপস্থিতি কম হয়েছে,” বলেন তিনি।

গত ডিসেম্বরের জাতীয় নির্বাচনে ভরাডুবির পর সরকারের বিরুদ্ধে কারচুপির অভিযোগ তোলা বিএনপি ও শরিকেরা এতে অংশ নেয়নি। তবে তারা অংশগ্রহণ করলে এই নির্বাচনটি আরো প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হতো বলেও মন্তব্য করেছেন ওবায়দুল কাদের।

উত্তরার নবাব হাবিবুল্লাহ মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে নিজের ভোট দেয়ার পর মেয়র পদপ্রার্থী আতিকুল ইসলামও বলেন, বিএনপি ভোটে এলে নির্বাচনটি আরও অংশগ্রহণমূলক হতো।

সিইসিকে দুষছে বিরোধী দল

রিজভীর মতে, জনগণ ও দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে বর্তমান সিইসি ও নির্বাচন কমিশনের গ্রহণযোগ্যতা নেই। একাদশ সংসদ নির্বাচনে সিইসি জনগণকে প্রতারিত করেছেন।

“৩০ ডিসেম্বর ভোট চুরির মহোৎসব করে একটা অবৈধ শাসক গোষ্ঠিকে রাষ্ট্রক্ষমতায় বসিয়ে দেশকে গভীর সংকটে নিপতিত করার হোতা হচ্ছেন সিইসি কে এম নূরুল হুদা,” বলেন এই বিএনপি নেতা।

ড. বদিউলও মনে করেন, নির্বাচন কমিশনই নির্বাচনকে একটা আনুষ্ঠানিকতায় পরিণত করেছে।

“এই সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের দায়বদ্ধতা জনগণের কাছে। আর দায়িত্ব হচ্ছে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে সুসংহত রাখা। বর্তমান কমিশন এ কাজে ব্যর্থ হয়েছে,” যোগ করেন এই নির্বাচন বিশেষজ্ঞ।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।