সংরক্ষিত নারী আসনে সাংসদ হতে আগ্রহী আট হিজড়া
2019.01.22
ঢাকা

সরকার তৃতীয় লিঙ্গ হিসেবে স্বীকৃতি দিলেও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংরক্ষিত নারী আসনে সাংসদ হওয়ার জন্য আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম কিনেছেন আটজন হিজড়া। নিজেদের ‘রূপান্তরিত নারী’ দাবি করে এই কোটায় সাংসদ হতে চাওয়া অধিকার হিসেবেই দেখছেন তাঁরা।
অন্যদিকে আওয়ামী লীগ বলছে, নারীদের জন্যই এই সংরক্ষিত আসন। তাই দলের প্রতি নিবেদিত প্রাণ নারী কর্মীদেরই এসব আসনের জন্য বিবেচনা করা হবে।
তবে মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন, তৃতীয় লিঙ্গ হলেও এসব হিজড়ারা নিজেদের নারী মনে করেন এবং সেভাবেই জীবন যাপন করেন বলে নারী কোটায় সাংসদ হতে চাওয়ায় কোনো জটিলতা নেই। ‘হিজড়াদের’ জাতীয় সংসদে আসার আগ্রহকে স্বাগত জানিয়েছেন তাঁরা।
নির্বাচন কমিশনও (ইসি) বলছে, হিজড়া হলেও তাঁরা যদি নারী হিসেবে ভোটার তালিকায় নিবন্ধিত থাকেন তাহলে সংরক্ষিত নারী আসনে সাংসদ হওয়ার ক্ষেত্রে আইনগত কোনো বাধা নেই।
ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমেদ বেনারকে বলেন, “হিজড়া হলেও ভোটার নিবন্ধনের সময় নারী হিসেবে নিবন্ধিত হয়ে থাকলে সংরক্ষিত আসনে ভোট করতে আইনগত কোনো বাধা নেই।”
২০১৩ সালে হিজড়াদের ‘তৃতীয় লিঙ্গ’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে সরকার। এর মাধ্যমে সমাজে একটি পরিবর্তনের ধারা শুরু হলেও এখনো নানা বৈষম্যের শিকার তৃতীয় লিঙ্গের মানুষেরা।
এদিকে গত বছরের জুলাইয়ে হিজড়াদের ভোটার হিসেবে নিবন্ধনের সিদ্ধান্ত নেয় ইসি। তবে এখনো এই কার্যক্রম শুরু হয়নি। ফলে এখনো কেউ তৃতীয় লিঙ্গ হিসেবে নিবন্ধিত হননি। একাদশ সংসদ নির্বাচনেও হিজড়ারা নারী হিসেবেই ভোট দিয়েছেন।
জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত নারী আসনের সাংসদ হওয়ার জন্য এবার আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম যারা কিনেছেন তাঁদের একজন আরিফ বর্তমানে নিজেকে পরিচয় দেন আরিফা ইয়াসমিন ময়ূরী হিসেবে।
নামের মতোই পোশাক, আচার-ব্যবহারেও তিনি পুরুষ নন, নারী। সবাই তাঁকে ‘হিজড়া’ ডাকলেও নিজেকে তিনি পরিচয় দেন ‘রূপান্তরিত নারী’ বলে।
ময়মনসিংহ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে তড়িৎকৌশলে ডিপ্লোমা পাস করা ময়ূরী (২৯) বেনারকে বলেন, আমার বাবা সিরাজুল ইসলাম মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। ছোটবেলায় মায়ের মুখে যুদ্ধের গল্প শুনে বড় হয়েছি। তখন থেকেই ভাবতাম দেশের জন্য যুদ্ধ করব। কিন্তু আমার দেশ এখন স্বাধীন। অস্ত্র ধরে যুদ্ধ আর নেই। এখনকার জাতির উন্নয়নের যুদ্ধ অংশ নিতে চাই।”
ময়ূরী বলেন, “সমাজে পিছিয়ে পড়া, অবহেলিত জনগোষ্ঠী তৃতীয় লিঙ্গের মানুষেরা। তাঁদের জীবনমান উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে সংসদে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের প্রতিনিধি হতে চাই। পাশাপাশি নারী–শিশুসহ অবহেলিত মানুষের পাশে দাঁড়াতে চাই।”
সংরক্ষিত নারী আসনে সাংসদ হতে চান ওহিদুল ইসলামও যিনি রূপান্তরিত নারী হিসেবে পার্বতী নামে পরিচিত।
তিনি বেনারকে বলেন, শিক্ষা, বাসা ভাড়া থেকে শুরু করে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষেরা বৈষম্যের শিকার। তাদের অধিকার আদায়ে তাদেরই প্রতিনিধি হিসেবে সংসদে যেতে চাই।”
আশা করছি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর দলের পক্ষ সেই সুযোগ আমাদেরকে দেবেন।
তবে সংরক্ষিত নারী আসনে হিজড়াদের মনোনয়ন কেনা বিষয়ে জানতে চাইলে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ বেনারকে বলেন, “এই আসনগুলো নারীদের জন্য। তাই অন্য কোনো লিঙ্গের মানুষের এই আসনে সাংসদ হওয়ার সুযোগ নেই।”
“তাছাড়া মুক্তিযোদ্ধা পরিবার, বঙ্গবন্ধুর সৈনিক, আওয়ামী লীগের পরীক্ষিত নারী কর্মীদেরই এসব আসনের জন্য বিবেচনা করা হবে,” বলেন তিনি।
তবে মানবাধিকার কর্মী খুশি কবির বেনারকে বলেন, তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের জাতীয় সংসদে আসার আগ্রহকে স্বাগত জানাই। তারা যেভাবে ভোটার হিসেবে নিবন্ধন করিয়েছিল সেভাবেই সংরক্ষিত নারী আসনে মনোনয়ন ফরম কিনেছেন।
“যদিও যারা মনোনয়ন দেবে বিষয়টি তাদের ওপর নির্ভর করে। তবে হিজড়া হয়ে নারী কোটায় সাংসদ হতে চাওয়া কোনোভাবে বিতর্কিত নয়,” বলেন তিনি।
এদিকে একাদশ জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত নারী আসনে নির্বাচনের তফসিল দুই সপ্তাহ এগিয়ে এনেছে ইসি। আগামী ৩ ফেব্রুয়ারি এই তফসিল ঘোষণা করা হবে বলে নিশ্চিত করেছেন নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ।
তিনি বলেন, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের নির্বাচনসহ সার্বিক বিষয় বিবেচনা করে এই তফসিল এগিয়ে এনে আগামী ৩ ফেব্রুয়ারি ঘোষণা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
এর আগে সংরক্ষিত নারী আসনের নির্বাচনের তফসিল আগামী ১৭ ফেব্রুয়ারি ঘোষণার সিদ্ধান্ত জানায় ইসি।
আইন অনুসারে, সাধারণ নির্বাচনের ফলাফলে গেজেট প্রকাশের ৯০ দিনের মধ্যে জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত মহিলা আসনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে হবে। গত ১ জানুয়ারি একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ীদের গেজেট প্রকাশিত হয়।
জাতীয় সংসদের ৩৫০ আসনের মধ্যে ৫০টি আসন নারীদের জন্য সংরক্ষিত। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী দলের আনুপাতিক হার অনুসারে আওয়ামী লীগ ৪৩টি, জাতীয় পার্টি ৪টি, বিএনপি একটি, ওয়ার্কার্স পার্টি একটি ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জোটভুক্ত হয়ে একটি সংরক্ষিত আসন পেতে পারে।