খালেদা জিয়ার মুক্তি চেয়ে সরকারের কাছে পরিবারের আবেদন
2020.03.09
ঢাকা

দুর্নীতির দায়ে দণ্ডিত বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য লন্ডন যাওয়ার অনুমতি চেয়ে সরকারের কাছে আবেদন জানিয়েছে তাঁর পরিবার।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান আবেদন পেয়েছেন জানিয়ে বেনারকে বলেন, আবেদনটি আইন মন্ত্রণালয়ে মতামতের জন্য পাঠানো হয়েছে।
খালেদা জিয়ার বোন সেলিমা ইসলাম সোমবার বেনারকে বলেন, খালেদা জিয়া বিছানা থেকে উঠতে, এমনকি খেতেও পারছেন না। সেজন্য তাঁরা ‘মানবিক কারণে’ তাঁর মুক্তি চেয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছেন। তবে সরকারের কাছ থেকে এখনো কিছু জানানো হয়নি।
সেলিমা ইসলাম বলেন, “আমরা প্যারোল অথবা অন্য কিছু না বলে শুধু উন্নত চিকিৎসা করাতে লন্ডন যাওয়ার জন্য তাঁর মুক্তির আবেদন করেছি। একজন মানুষ অসুস্থ, যিনি তিনবারের প্রধানমন্ত্রী তাঁকে মানবিক কারণে মুক্তি দিতে হবে। কী প্রক্রিয়ায় দেবে, সেটি সরকারের বিষয়।”
খালেদা জিয়া সরকারের দেয়া শর্তে প্যারোলে মুক্ত হতে চান না জেনেও কেন আবেদন করা হলো—এমন প্রশ্নের জবাবে সেলিমা ইসলাম বলেন, “সে রাজি নয়। কিন্তু তাকে রাজি করা হবে। তাকে কারাগার থেকে বাইরে আসতে হবে। তার পেটে ভীষণ ব্যাথা। খেতে পারে না, বসতে পারে না। সে ভীষণ অসুস্থ।”
তিনি বলেন, “একজন প্রবীণ নারী দুই বছরের বেশি সময় ধরে কারাগারে ও হাসপাতালে অবস্থান করছে—এটি অমানবিক। সে একটি বৃহৎ দল পরিচালনা করেছে, তিনবার প্রধানমন্ত্রী ছিল।”
খালেদা জিয়ার বর্তমান বয়স ৭৪ বছর।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বেনারকে বলেন, “গত বুধবার খালেদা জিয়ার মুক্তি চেয়ে আমাদের কাছে তাঁর পরিবারের পক্ষ থেকে একটি আবেদন এসেছে। আইন অনুযায়ী আমি আবেদনটি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দিয়েছি।”
“আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত পাওয়ার পর আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব,” বলেন তিনি।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “তাঁকে মুক্তি দিতে গেলে অবশ্যই আদালতের অনুমতি নিতে হবে। আদালতের অনুমতি ছাড়া আমরা তাঁকে মুক্তি দিতে পারি না।”
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে খালেদা জিয়ার মুক্তির আবেদনটি পেয়েছেন জানিয়ে আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার আনিসুল হক বেনারকে বলেন, “ওই আবেদনে তাঁরা বলেছেন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য লন্ডন নিতে চান। সেকারণে তাঁরা সরকারের নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে খালেদা জিয়ার মুক্তি চান। তবে তাঁরা সরাসরি প্যারোলের কথা বলেননি।”
তিনি বলেন, “আমরা আবেদনটি নিয়ে তাঁকে মুক্তি দেয়ার আইনগত বিষয়গুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছি। তবে, আমার কাছে মনে হয়েছে তাঁদের আবেদনটি আমাদের ফৌজদারি দণ্ডবিধির ৪০১ ধারায় মুক্তির আবেদন।”
“আইনগত দিক পর্যালোচনা করে আমরা আবেদনপত্রটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দেবো। প্রয়োজন মনে করলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে,” বলেন আইনমন্ত্রী।
প্রসঙ্গত, ফৌজদারি দণ্ডবিধির ৪০১ ধারা অনুযায়ী দণ্ডিত কোনো ব্যক্তিকে সরকার মুক্তি দিতে চাইলে, যে আদালত তাঁকে দণ্ডিত করেছে সেই আদালতের অনুমতি লাগে।
আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কর্নেল ফারুক খান বেনারকে বলেন, খালেদা জিয়া যদি প্যারোলে মুক্তি চান তাহলে সরকার বিবেচনা করবে।
‘মুক্তি পেলেও থাকবে শর্ত’
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. নিজাম উদ্দিন আহমেদ বেনারকে বলেন, সরকারের কাছে খালেদা জিয়ার মুক্তির আবেদন আমাদের রাজনীতিতে একটি ‘বড় ঘটনা’।
তিনি বলেন, “পরিবারের পক্ষ থেকে সরকারের কাছে মুক্তির আবেদন করার কারণ হলো, দল বিএনপি রাজনৈতিক আলোচনা অথবা আন্দোলনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের ওপর চাপ সৃষ্টি করে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করার কোনো ব্যবস্থা করতে পারেনি।”
ড. নিজাম বলেন, “দলের পক্ষ থেকে বারবার বলা হচ্ছে রাজনৈতিক কারণে খালেদা জিয়াকে সাজা দিয়েছে সরকার। এখন সেই দল কীভাবে সরকারের কাছে মাথা নিচু করে দলীয় প্রধানের মুক্তির আবেদন জানাবে?”
“যেহেতু খালেদা জিয়া আদালতের মাধ্যমে দণ্ডিত, সেহেতু সরকার তাঁকে সরাসরি ছেড়ে দিতে পারবে না। সরকার তাঁকে প্যারোলে মুক্তি দিতে পারে। তবে যদি প্যারোলে মুক্তি পেতে রাজি হন, সে ক্ষেত্রে সরকারের পক্ষ থেকে অনেক কঠিন শর্ত দেয়া হবে।”
তিনি বলেন, “সরকারের শর্তে যদি উনি প্যারোলে মুক্তি পান, সেক্ষেত্রে তাঁর রাজনৈতিক জীবন অবসান হবে বলা যায়।”
“তবে, দলের নেতা-কর্মীদের জন্য খালেদা জিয়ার মুক্তি, তা যেভাবেই হোক না কেন বড় খবর,” বলেন ড. নিজাম।
তিনি বলেন, “তবে আমি মনে করি খালেদা জিয়াকে মানবিক কারণে মুক্তি দিলে সরকার লাভবান হবে। কারণ সাধারণ মানুষের মধ্যে এই বার্তা গেছে যে, খালেদা জিয়া খুব অসুস্থ। তিনবারের প্রধানমন্ত্রীকে যদি মানবিক কারণে মুক্তি দেয়া না হয়, আর খালেদা জিয়ার মারাত্মক কিছু হয়ে যায় তাহলে সেই দায় সরকারকে নিতে হবে।”
এদিকে সরকার খালেদা জিয়াকে প্যারোলে মুক্তি দিতে চাইবে মন্তব্য করে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. তারেক শামসুর রেহমান বেনারকে বলেন, “খালেদা জিয়াকে যদি মুক্তি দেয়, তাহলে অনেক শর্ত দেবে সরকার। যেমন তিনি রাজনীতি করতে পারবেন না, ইত্যাদি, ইত্যাদি।”
অধ্যাপক তারেক বলেন, “আওয়ামী লীগ তাঁকে নিয়ে রাজনীতি করবে। তারা বলবে খালেদা জিয়া নিজেই স্বীকার করেছেন যে, তিনি এতিমের অর্থ আত্মসাৎ করেছেন।”
“খালেদা জিয়া ১৯৯০ সালের গণ আন্দোলনের মাধ্যমে আপসহীন নেত্রী হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন বলা যায়। তবে মুক্তি নিলে তাঁর সেই আমেজ আর থাকবে না,” বলেন ড. তারেক শামসুর রেহমান।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় দণ্ডিত হয়ে ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে কারাগারে রয়েছেন খালেদা জিয়া। জিয়া চ্যারিটেবল দুর্নীতি মামলায়ও কারাদণ্ড হয় খালেদা জিয়ার। বর্তমানে তিনি মোট ১৭ বছরের কারাদণ্ড ভোগ করছেন। তাঁর বিরুদ্ধে কমপক্ষে ৩৫টি মামলা রয়েছে।