টিআইবি ওয়েবসাইটে তাদের সম্পদের বিবরণী প্রকাশ করেছে

ঢাকা থেকে শহিরিয়ার শরীফ
2016.04.21
TIB-Wealth-Statement620.jpg ‘তৈরি পোশাক খাতের সুশাসন অগ্রবর্তী চ্যালেঞ্জ ও করণীয়’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে সাংবাদিকেরা সম্পদ বিবরণী প্রকাশ করা সম্পর্কিত প্রশ্ন করলে জবাব দেন ইফতেখারুজ্জামান। এপ্রিল ২১, ২০১৬।
ফোকাস বাংলা

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্যসহ উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের সম্পদের হিসাব ওয়েবসাইটে দেওয়া হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার টিআইবি আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা জানান সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান।

গত ১৩ এপ্রিল নিজের ফেসবুকে এক স্ট্যাটাসে টিআইবির সম্পদের বিবরণ প্রকাশের দাবি জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি উপদেষ্টা এবং তাঁর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়। দেশের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে এই খবর প্রকাশ হয়। এ নিয়ে আলোচনা–সমালোচনাও হয়েছে।

মাস কয়েক আগে জাতীয় সংসদের সমালোচনা করায় টিআইবির নিবন্ধন বাতিলের প্রস্তাব করেছিলেন সরকারি দলের সাংসদ ও সাবেক মন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত। সংসদ অধিবেশন বিষয়ে এক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে সংসদকে ‘পুতুল নাচের নাট্যশালা’ বলায় টিআইবির বিরুদ্ধে জাতীয় সংসদে সরকারি ও বিরোধী দল ব্যাপক সমালোচনা করে।

এরই ধারাবাহিকতায় টিআইবির সম্পদের বিবরণ প্রকাশের দাবি জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি উপদেষ্টা এবং তাঁর ছেলে  সজীব ওয়াজেদ জয়। তিনি বলেন, টিআইবি সম্পদের বিবরণ প্রকাশ করে এটা প্রমাণ করুক যে তারা তাদের চিলি শাখার মতোই দুর্নীতিগ্রস্ত নয়।

পানামা পেপারস কেলেঙ্কারিতে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল চিলি শাখার প্রেসিডেন্ট পদত্যাগ করেন। সেই সূত্রে সমালোচনার মুখে পড়ে টিআইবি।

ফেসবুকে দেওয়া স্ট্যাটাসে সজীব ওয়াজেদ লেখেন, ‘একটা বিষয় আমি উত্থাপন করতে চাই, সেটা হলো সম্প্রতি চিলির ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের প্রধানের পদত্যাগ। বিদেশে সম্পদ লুকানোর বিষয়ে তার নাম এসেছিল পানামা পেপারসে। এখন আমার প্রশ্ন হচ্ছে, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল কতটা স্বচ্ছ এবং অন্যদের দুর্নীতিগ্রস্ত বলার অধিকার তাদের কীভাবে থাকে?’

গতকাল বৃহস্পতিবার ‘তৈরি পোশাক খাতের সুশাসন অগ্রবর্তী চ্যালেঞ্জ ও করণীয়’ শীর্ষক এক প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে সাংবাদিকেরা সম্পদ বিবরণী প্রকাশ করা সম্পর্কিত প্রশ্ন করেন তাঁকে।

রাজধানীর ধানমন্ডিতে নিজস্ব কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত ওই সংবাদ সম্মেলনে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, “সম্পদের হিসাব নিয়ে প্রশ্ন ওঠাটা আমাদের জন্য ভালো।”

“যে-কেউ ওয়েবসাইট থেকে আমাদের আয়–ব্যয়ের হিসাব দেখে নিতে পারেন,” জানান ইফতেখারুজ্জামান।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বেনারকে বলেন, “প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টাসহ যেকোনো ব্যক্তির অধিকার রয়েছে টিআইবির স্বচ্ছতা সম্পর্কে জানার বা প্রশ্ন করার। টিআইবির সব আয়-ব্যয় বা সম্পদের তথ্য জনগণের জ্ঞাতার্থে আমাদের ওয়েবসাইটেও প্রকাশ করা হয়েছে।

ইফতেখারুজ্জামানের এই বক্তব্যের সূত্র ধরে ওয়েবসাইটে গিয়ে এ–সংক্রান্ত বক্তব্যের সত্যতা পাওয়া যায়।

“টিআইবির বোর্ড সদস্য, নির্বাহী পরিচালক, উপপরিচালকদের সম্পদের বিবরণও ওয়েবসাইটে দেওয়া আছে,” বেনারকে জানান টিআইবির পরিচালক (আউটরিচ অ্যান্ড কমিউনিকেশন) রিজওয়ান-উল-আলম।

গত কয়েক মাস ধরে চাপের মুখে রয়েছে দুর্নীতির বিরুদ্ধে কাজ করা আন্তর্জাতিক এই সংস্থাটি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের ২০১৫ সালের মানবাধিকার বিষয়ক প্রতিবেদনেও টিআইবির চাপে ও সমালোচনার মুখে থাকার প্রসঙ্গটি উল্লেখ করা হয়।

পোশাক খাত নিয়ে সংবাদ সম্মেলন

সংবাদ সম্মেলনে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘গত তিন বছরে পোশাক খাত গর্ব করার মতো স্থানে এসেছে। এটি বৈশ্বিক স্বীকৃতি পাওয়ার যোগ্য। তবে কাগজপত্র, আইন ও বিধিমালায় যেসব অগ্রগতি এসেছে, সেগুলো প্রয়োগ করা ও অব্যাহত রাখা জরুরি। এর পাশাপাশি যেসব ক্ষেত্রে অগ্রগতি হয়নি, সেগুলোর ওপর নজর দিতে হবে।’

রানা প্লাজা ধসের পর অপরাধীদের বিচারকাজ ধীরগতিতে চলছে বলে উল্লেখ করে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করে উদাহরণ তৈরি করা না গেলে এ ধরনের অপরাধ ঘটতেই থাকবে।’

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।