তুষার ধসের মধ্যে বেঁচে যাওয়া এভারেস্ট আরোহীর মুখে প্রথম কথা ছিলো “তুমি শেষ”

রোহিত ওয়াধওয়ানি
2015.04.29
NP-quake হিমালয়ে ভুমিকম্পের আঘাতে তুষার ধসের কবলে পর্বত আরোহীরা। ২৮ এপ্রিল, ২০১৫
এএফপি

সবচেয়ে ভয়াবহ দূর্‍যোগটি আঘাত হানে এভারেস্টের উপর, এতে অন্তত ১৯ জন মারা যায় ও ৬১ জন আহত হয়। নেপাল সরকার পাহাড়ের শিখরে ওঠার পথটি শিঘ্রই মেরামত করতে যাচ্ছে।

বিশ্বের সবচেয়ে উচ্চ শিখরে ওঠার প্রথম চেস্টা নিচ্ছিলো সরজ কুমারী।যদিও সে সাগর থেকে ১৭,৭০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত বেইজ ক্যাম্পের চেয়ে উপরে কখনো উঠেনি। কিন্তু সে চাইলেও ভুলে যেতে পারছে না।

২৫ এপ্রিল দুপুরে ৩৩ বছর বয়েসি ভারতের গুজরাট পুলিশের এডিশনাল সুপারিন্টেন্ডেন্ট বেইজ ক্যাম্পে তাবুর মধ্যে বসে পড়ছিলো, এমন সময় ৭.৮ মাত্রার ভুমিকম্পটি আঘাত হানে।অজস্র ধারায় তুষারপাত ও বরফের ধস এভারেস্ট চূড়া থেকে পড়তে থাকে।

কাঠমান্ডু থেকে ফোনে কুমারী জানায়, “এটা ছিলো ভয়াবহ, ভুমি কাপছিলো, আমি পায়ের উপর দাঁড়াতে পারছিলাম না। হামাগুড়ি দিয়ে তাবু থেকে বের হই। আমার টিমের সদস্যরা আমাকে সাহায্য করছিলো। মাথা ঢেকে ফেলার আগেই বেরিয়ে আসি। দেখি যে ১৫ তলা ভবনের আকারে বরফের চাই বেইজ ক্যাম্পের দিকে ধেয়ে আসছে”। কুমারী ছিলো ৫-সদস্যের ভারতীয় সরকারী চাকুরীজীবিদের টিমে একমাত্র নারী। তারা প্রথম ভারতীয়ের এভারেস্ট আরোহণের ৫০ বৎসর পূর্তিতে চূড়ায় ওঠার অভিযানে বের হয়েছে।

তিনি আরো বলছিলেন, “যদিও আমি তুষারপাতের ভয়াবহতার ঘটনা পড়েছি এবং প্রামাণ্যচিত্র দেখেছি।কিন্তু নিজের চোখে না দেখলে তার আসল রূপ বুঝতে পারতাম না। এটা যেনো সুনামির মতো ছিলো। আমি তখন নিজেকে নিজে বলি, ‘এটাই হলো সেই, তুমি আজ শেষ’”।

এই সময়, আরোহী টিমের নেতা ভারতীয় প্রশাসনের রবীন্দ্র কুমার তার নেপালী গাইড কাজি শেরপাকে নিয়ে উপরের বেইজ ক্যাম্পে সিকিম রাজ্যের উত্তর-পূর্ব দিকে ২ সপ্তাহ আগেই পাহাড়ে ওঠার পথে ছিলেন।তাদেরকে ২৯ হাজার ফুট পাহাড় বাইতে পরবর্তি যাত্রার দিন ঠিক করা ছিল মে মাসের ২য় সপ্তাহে।

কুমারীর সঙ্গে অন্য ৩ সহযাত্রী ছিলেন দক্ষিণ কর্নাটাকা থেকে ফরেস্ট সার্ভিসের প্রভাকরণ, রাজস্থান থেকে ভারতীয় জন প্রশাসনের বিক্রম জিন্দাল ও মহারাস্ট্র পুলিশের সুহাইল শর্মা। কুমারী সহ সবাই একটা দৌড় দেবার কথা ভাবলেন। কয়েক মুহূর্তের মধ্যে সবাই বুঝলো এটা হবে অযথা।

কুমারী বলছিলেন, “দৌড়ানোর চিন্তা বাদ দিলাম , আমরা সোজা হয়ে দাড়াতেই পারছিলাম না। আমরা থেমে গেলাম এবং একে অপরের হাত ধরে বসে পড়লাম এবং তুষার ধসের দিকে পিছন ফিরে থাকলাম, সে সময় আমরা আমাদের পরিনতির কথা জেনে একরকম আত্নসমর্পণ করলাম”।

“এক সেকেন্ডের মধ্যে আমরা চুপ হয়ে গেলাম, শাস নিতে শুরু করলাম এবং কম্বল থেকে বেরিয়ে গুড়া স্নোর মধ্যে ডুবে থাকলাম। সৌভাগ্যবশত পাথরবাহিত তুষার ধসটি  আমাদেরকে আঘাত করলো না। ভুমিকম্পে বিধ্বস্ত এই তুষার ধস থেকে জিন্দাল ও শর্মা সহ আমি রক্ষা পেলাম। কিন্তু প্রভাকরণ অতোটা ভাগ্যবান নন, তার ডান পায়ে পাথরের আঘাত লেগে কয়েকটা জায়গায় ভেঙ্গে যায়, টিমের অন্য সদস্যরা কোনো আঘাত পান নি”।
প্রভাকরণ বেঁচে গেলেও তার বেইজ ক্যাম্পের অন্য ১৯ জন তুষার ধসে চাপা পড়ে মারা যান। অন্যদিকে, রবীন্দ্র কুমার যিনি এই অভিযানের নেতা তিনিও বেঁচে যান।এর আগে ২০১৩ সালে তিনি চূড়ায় উঠতে সফল হন। বেনারকে তিনি বলেন, “ এভারেস্টে ছোট-খাটো তুষার ধস নিয়মিত ঘটনা, কিন্তু এটা ছিল ভয়াবহ। সেদিক থেকে আমরা আমাদেরকে ভাগ্যবান বলতে পারি”।

কুমার আরো জানান, আমরা যখন বেইজ ক্যাম্পে আসি তখন দেখতে পাই, এক চীনা মেয়ে আমাদের কাছেই তার তাবু ছিলো। ৫০ মিটার নীচে সে তার তাবু সহ ডেবে যায়। তার মাথা পাথরের আঘাতে চূড়মার হয়ে যায়”।

কুমার ও অন্য সদস্যরা আহত প্রভাকরণকে নিয়ে নীচে নেমে আসে ৩ ঘন্টা সময় নিয়ে। ফিরে আসে গোরাখশেপ-এ কাছের গ্রামের একটি বেইজে। “ আমরা এখন ভারতীয় সরকারের কাছ থেকে জানার অপেক্ষায় আছি, এই অভিযান বন্ধ রেখে ফিরে যাবো নাকি নতুন করে পাহাড়ে ওঠার চেস্টা করবো”, জানায় কুমার।

এদিকে ইন্ডিয়ান মাউন্টেনিয়ারিং ফেডারেশনের সেক্রেটারী এইচ কে কুত্তি বেনার নিউজকে জানিয়েছে, “এই টিম দুই-এক দিনের মধ্যে দিল্লিতে ফিরে আসবে”।

২৯ এপ্রিল পর্যন্ত ২১০ জন পর্বত আরোহীকে ক্যাম্প ১ ও ২ থেকে হেলিকপ্টারে করে নামিয়ে আনা হয়, যেটা ইতিহাসে নজিরবিহীন। এ বছর ৩৭০ জন আরোহীকে চূড়ায় ওঠার অনুমোদন দেয়া হয়েছে।প্রতি অনুমোদনে ১১ হাজার ডলার খরচ ধরা হয়ে থাকে।



মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।