ঝিনাইদহে এবার হিন্দু সেবায়েতকে কুপিয়ে হত্যা
2016.07.01

জুলাই ০১,২০১৬ ইস্টার্ন সময় সন্ধ্যা ৬ঃ৩০ মিনিটে প্রতিবেদনটি আপডেট করা হয়
দেশের দক্ষিণাঞ্চলীয় জেলা ঝিনাইদহ সদর উপজেলায় মঠের এক সেবায়েতকে কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। তাঁর নাম শ্যামানন্দ দাস ওরফে বাবাজি (৫০)।
গত ১০ জুন পাবনার সদর উপজেলার হিমাইতপুর গ্রামের শ্রীশ্রী ঠাকুর অনুকূল চন্দ্র সৎসঙ্গ সেবাশ্রমের (হিমাইতপুর ধাম) সেবায়েত নিত্যরঞ্জন পান্ডেকে (৬২) কুপিয়ে হত্যা করা হয় একই কায়দায়।
ওই ঘটনার তিন দিন আগে ৭ জুন ঝিনাইদহ সদর উপজেলার নলডাঙ্গা ইউনিয়নের মহিষারভাগাড় এলাকায় হিন্দু পুরোহিত আনন্দ গোপাল গাঙ্গুলীকে (৭০) কুপিয়ে ও গলা কেটে হত্যা করা হয়।
ঘটনার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট (আইএস) এই হত্যার দায় স্বীকার করেছে। আইএসের কথিত বার্তা সংস্থা আমাক নিউজের বরাত দিয়ে ইন্টারনেটে জঙ্গিগোষ্ঠীর তৎপরতা নজরদারিতে যুক্ত যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সাইট ইন্টেলিজেন্ট গ্রুপ শুক্রবার রাতে এই খবর দিয়েছে।
এদিকে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বিকাশ স্বরূপ সম্প্রতি বাংলাদেশের সংখ্যালঘু হত্যার বিষয়ে বলেন, “ঢাকায় আমাদের হাইকমিশন অত্যন্ত নিবিড় ভাবে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের উপর হামলার ঘটনাগুলো পর্যবেক্ষণ করছে এবং বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক স্বাধীনতার বিষয়ে বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষের কাছে যথাযথ ভাবে উপস্থাপন করছে।”
তিনি আরো বলেন, “বাংলাদেশ সরকার আমাদের আশ্বস্ত করেছেন যে তাঁরা সম্পূর্ণভাবে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের অধিকার রক্ষা করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।"
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল অবশ্য গতকাল দাবি করেছেন, এ ঘটনায় জড়িতদের খুঁজে বের করা সম্ভব হবে। কারণ পুলিশ ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী পেয়েছে।
স্থানীয় পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীর বরাত দিয়ে ঝিনাইদহের একজন স্থানীয় সাংবাদিক বেনারকে জানান, “প্রতিদিনের মতো গতকাল শুক্রবার ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে পূজার জন্য ফুল তুলতে মঠ থেকে বের হয়েছিলেন শ্যামানন্দ। এ সময় একটি মোটরসাইকেলে করে আসা তিন ব্যক্তি তাঁকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে চলে যায়।”
মোটরসাইকেলের আরোহীদের মুখ গামছা দিয়ে বাঁধা ছিল। মাথায় ছিল ক্যাপ। একজনের হাতে ছিল একটি রামদা।
নিহত সেবায়েত উপজেলার উত্তর কাষ্ট সাগরা গ্রামের শ্রীশ্রী রাধামদন গোপাল বিগ্রহে (মঠ) কর্মরত ছিলেন।
শ্যামানন্দের বাড়ি নড়াইল সদর উপজেলার মুসুরিয়া গ্রামে। তাঁর বাবার নাম নাম কিরণ চন্দ্র। গত তিন বছর ধরে সেবায়েতের দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন ওই ব্যক্তি।
“দুর্বৃত্তরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে শ্যামানন্দকে গুরুতরভাবে জখম করে। ঘটনাস্থলে তাঁর মৃত্যু হয়,” বেনারকে জানান ঝিনাইদহ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাসান হাফিজুর রহমান।
ওসি বলেন, কে বা কারা এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে, তা এখনই বলা যাচ্ছে না। তবে আসামিদের গ্রেপ্তার করা সম্ভব হবে এবং বিচারের মুখোমুখি করা হবে।
“শ্যামানন্দ ভালো মানুষ ছিলেন। পূজা-অর্চনায় সব সময় ব্যস্ত থাকতেন। তাঁর বাইরে যাওয়া-আসা খুব কম ছিল। তাঁর কোনো ব্যক্তিগত শত্রু ছিল না,” বেনারকে জানান মঠ পরিচালনা কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মণি কুমার রায়।
উল্লেখ্য, গত প্রায় দেড় বছরে অর্ধশতাধিক নাগরিককে জবাই করে ও কুপিয়ে হত্যা করল দুর্বৃত্তরা, যেগুলোর ধরণ প্রায় একইরকম। বেশিরভাগ হত্যার দায় স্বীকার করেছে আইএস বা অন্য কোনো জঙ্গি সংগঠন।
বন্দুকযুদ্ধে নিহত দুই
একই জেলার সদর উপজেলার তেঁতুলবাড়িয়া গ্রামে শুক্রবার ভোরে পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ দুজন নিহত হয়েছেন।
তাঁরা হলেন ঝিনাইদহ সদর উপজেলার বদনপুর গ্রামের শহীদ আল মাহমুদ (২৪) ও কুষ্টিয়ার আনিসুর রহমান (২৫)। মাহমুদ ঝিনাইদহ সিদ্দিকী আলিয়া মাদ্রাসা ও আনিসুর ঝিনাইদহ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ছাত্র।
পুলিশের দাবি, ‘বন্দুকযুদ্ধে’ পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) প্রবীর কুমারসহ তিনজন আহত হয়েছেন। অন্য দুজন হলেন কনস্টেবল রাব্বী হাসান, তরিকুল ইসলাম।
ঘটনাস্থল থেকে আগ্নেয়াস্ত্র, গুলি, ধারালো অস্ত্র ও বিস্ফোরক দ্রব্য উদ্ধারের দাবি করেছে পুলিশ।