প্রবাসী আয় বাড়াতে দক্ষতা বৃদ্ধি ও ভাষা শিক্ষার ওপর গুরুত্ব আরোপ
2015.10.21

শ্রমিকদের ভাষা শিখিয়ে ও দক্ষ করে বিদেশে পাঠাতে পারলে দেশে প্রবাসী আয়ের (রেমিট্যান্স) পরিমাণ কয়েক গুণ বেড়ে যাবে—এমন মত দিয়েছেন সরকারের মন্ত্রী, অর্থনীতিবিদ ও জনশক্তি বিশেষজ্ঞরা।
দেশের অর্থনীতিতে বড় ধরনের অবদান রাখা প্রবাসী শ্রমিকদের নিয়ে এক গুরুত্বপূর্ণ সংলাপে গতকাল বুধবার বেরিয়ে আসে প্রবাসী শ্রমিকদের বড় অংশ অদক্ষ থাকার বিষয়টি। এর পাশাপাশি উঠে আসে, বাংলাদেশের শ্রমিকেরা ইংরেজিও ঠিকমতো বলতে পারেন না।
আর এই দুটি কারণেই তাঁরা অন্য অনেক দেশের শ্রমিকদের তুলনায় বেতনও কম পান বলে মত দেন সংশ্লিষ্টরা। এরপরও বাংলাদেশের অর্থনীতিতে প্রবাসী-আয়ের অবদান মোট জিডিপির দশ শতাংশের মতো।
রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে অভিবাসী শ্রমিকদের আর্থিক অন্তর্ভুক্তিকরণ ও সামাজিক সুরক্ষা নিয়ে আয়োজিত এই সংলাপের আয়োজক ছিল প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) এবং বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)।
“মধ্যপ্রাচ্যে ফিলিপাইনের লোকেরা বাংলাদেশিদের চেয়ে চার গুণ বেশি বেতন পান। কারণ তাঁরা অনর্গল ইংরেজি বলতে পারেন। সে জন্য তাঁরা মধ্যম সারির পদে কাজ পান,” সংলাপে অংশ নিয়ে জানান সিপিডির ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা সৈয়দ মঞ্জুর এলাহী।
তিনি বলেন, “আমরা যদি শ্রমিকের বদলে আধা দক্ষ (সেমি স্কিলড) জনশক্তিও বিদেশে পাঠাতে পারি, তাহলে আমাদের রেমিট্যান্স কয়েক গুণ বেড়ে যাবে।”
সংলাপে উঠে আসে, দেশের অদক্ষ, স্বল্প দক্ষ এবং অর্ধশিক্ষিত যে শ্রেণিটি বিদেশে যায়, তাদের সংখ্যা বিশাল, মোট ৮৬ লাখ প্রবাসীর মধ্যে ৫৩ লাখ (৬১ দশমিক ৬ শতাংশ) যারা এসএসসি পাস করেনি। আবার তাঁদের মাধ্যমেই আসে আমাদের রেমিট্যান্স আয়ের সিংহভাগ।
“সরকারের লক্ষ্য হলো এসএসসি পাস করার পর বিদেশে যেতে আগ্রহীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া। এই সুযোগও ইতিমধ্যে সৃষ্টি করা হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে দক্ষ জনশক্তি রপ্তানি করা সম্ভব হবে,” সংলাপে মত দেন প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রী নুরুল ইসলাম।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, ২০১২-১৩ অর্থবছরে আমাদের মোট বার্ষিক রেমিট্যান্স এক হাজার ৪৪৬ কোটি ডলারের ৬৩ শতাংশ এসেছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকে। অবশ্য ২০১৩-১৪ অর্থবছরের জুন পর্যন্ত এই পরিমাণ কমে হয়েছিল এক হাজার ৪২২ কোটি ডলার।
তবে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে দেশে ১ হাজার ৫৩০ কোটি ডলার প্রবাসী-আয় এসেছে, যা গত অর্থ বছরের তুলনায় ৭ দশমিক ৬০ শতাংশ বেশি।
উল্লেখ্য, ভারতে বার্ষিক রেমিট্যান্স আসে সাত হাজার কোটি ডলারের বেশি আর পাকিস্তানে আসে এক হাজার ৪০০ কোটি ডলারের মতো।
“আমাদের শ্রমিকদের দক্ষতার চেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে ভাষা। একই কাজ আমাদের লোকেরাও করে, শ্রীলঙ্কার লোকেরাও করে। কিন্তু শ্রীলঙ্কার লোকটা আমাদের লোকের চেয়ে ৬০-৭০ শতাংশ বেশি বেতন পায়। কারণ সে ইংরেজিতে ভালো কথা বলতে পারে,” সংলাপে মত দেন পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
সংলাপে বেরিয়ে আসে, অপেক্ষাকৃত সচ্ছল পরিবারের উচ্চশিক্ষিত যাঁরা বিদেশে কর্মরত এবং যাঁরা স্থায়ীভাবে অভিবাসী হয়ে যান, তাঁদের পাঠানো রেমিট্যান্স অদক্ষ ও অর্ধশিক্ষিত শ্রমশক্তির অবদানের চেয়ে তুলনামূলকভাবে অনেক কম।
এর কারণ, সচ্ছল পরিবার থেকে গেলে কিংবা সপরিবারে অভিবাসী হলে তাঁদের আর দেশে টাকা পাঠানোর প্রয়োজন ও গরজ থাকে না।
পরিসংখ্যান ব্যুরোর সাম্প্রতিক সমীক্ষায় দেখা গেছে, কম সচ্ছল প্রত্যেক পরিবার তাদের প্রবাসী নিকটাত্মীয়দের কাছ থেকে বার্ষিক প্রায় দুই হাজার ৫০০ ডলার প্রবাসী-আয় অর্জন করে।
তবে একই সমীক্ষায় বেরিয়ে আসে, প্রবাসী-আয়ের তিন-চতুর্থাংশই ভোগ হয়ে যায়, অর্থাৎ কোনো উৎপাদনশীল বিনিয়োগে ব্যবহৃত হয় না।
পরিসংখ্যান ব্যুরোর ২০১৩ সালের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, প্রবাসী-আয়ের ৭৮ শতাংশ যায় খাদ্য, বস্ত্র, শিক্ষা, যাতায়াত ইত্যাদি খাতে। বাকি ১৭ শতাংশ খরচ হয় জমি বা বাসস্থানে এবং ৫ শতাংশ যায় বিলাসদ্রব্যে।